১৯৬৪ সালে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোম্পানির অপারেশনের ৫৮ বছর সম্পন্ন হয়েছে। একটি জাতীয় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জনসাধারণকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে এক অনন্য মহিমা অর্জন করেছে তিতাস। কোম্পানিটি বৃহত্তর ঢাকা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুৎ, সার, শিল্প, ক্যাপটিভ পাওয়ার, সিএনজি, বাণিজ্যিক ও আবাসিক এই সাত ক্যাটাগরিতে গ্যাস সংযোগ দিয়ে থাকে। ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত তিতাসের পাইপলাইন ১৩ হাজার ২৩৮ কিলোমিটার এবং বাজারে কোম্পানির বিক্রি অংশীদারি ৫৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
অধিভুক্ত এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকদের মধ্যে দেশীয় জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপণন, গ্যাস বিক্রয় এবং বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে তিতাস দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, তিতাসের বিরুদ্ধে অবৈধ গ্যাস-সংযোগসহ নানা অভিযোগও রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানী ও এর অবৈধ পাইপলাইনের মাধ্যমে লাখ লাখ গ্রাহককে সংযোগ দেয়া হয়, বিল আদায় হয় কিন্তু রাষ্ট্র তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয় না।
তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ, ঠিকাদার ও ক্ষমতাসীন কিছু নেতার যোগসাজশে ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগ আছে, অবৈধ সংযোগে যেসব গ্যাস ব্যবহƒত হয়, তা সিস্টেম লসের খাতে ঢুকিয়ে দেয় তিতাস। সিস্টেম লস নিয়েও তিতাসের কারসাজি রয়েছে। বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে তথ্য উঠে এসেছে যে, সিস্টেম লসের হিসাব নিয়ে তিতাস গোঁজামিলের আশ্রয় নিয়েছে। বিইআরসির হিসেবে সিস্টেম লস ১৩-১৪ শতাংশ যদিও তিতাস বলছে ২ শতাংশ। কোম্পানিটির নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ-সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দেয়া হয়নি। এমনকি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য জমা দেয়া আবেদনেও সঠিক তথ্য দেয়নি কোম্পানিটি।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য গণশুনানি না হলে হয়তো তিতাসের অনিয়ম সাধারণ মানুষ জানতেই পারত না। নিজেদের দায় ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মুনাফায় থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিতাস দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয়। এটি মুনাফা করবে, ব্যবসা সম্প্রসারণ করে আরও বেশি মানুষকে সেবা দেবে, এটিই প্রত্যাশা। আমরা মনে করি, তিতাসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া অবৈধ সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়। তাই আগে রাজস্ব আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন নাও হতে পারে। তিতাসে সরবরাহজনিত ক্ষতির (সিস্টেম লস) দায় সংস্থাটিকেই নিতে হবে।
মাঝেমধ্যে লাখ লাখ অবৈধ গ্রাহককে বৈধতা দেয় তিতাস। আবার বোর্ডসভায় বৈধতা না পেলেও নতুন গ্রাহকদের সংযোগ দেয়ার তথ্য তিতাসের সার্ভার বা তথ্যভান্ডারে যুক্ত করা হয়। এভাবে রাষ্ট্র বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারায়। এভাবে গ্রাহকের তথ্য যুক্ত করে দিয়ে বৈধ করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এ লক্ষ্যে অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করে সেটির তালিকা তৈরি করতে হবে। চুরিকে সরবরাহজনিত ক্ষতি (সিস্টেম লস) হিসেবে আখ্যা দিয়ে দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। তিতাসের এ ক্ষতি স্পষ্টকরণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।