তিতাস ইকোনমিক জোনে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মেঘনা গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আওতাধীন তিতাস ইকোনমিক জোনকে প্রি-কোয়ালিফিকেশন লাইসেন্স প্রদান করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। গতকাল বুধবার বেজা কার্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। এটি বেজার দেয়া ২২তম প্রি-কোয়ালিফিকেশন।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে চালিভাঙ্গায় প্রায় ১৬১ একর এলাকাজুড়ে তিতাস ইকোনমিক জোনের অবস্থান, যা পরবর্তীতে ৪০০ একরে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোনের উদ্যোক্তা মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। এই জোনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদনের জন্য শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জোন হিসেবে

গড়ে তুলতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কারখানা ও প্রশাসনিক ভবন, পণ্যাগার, লজিস্টিক এলাকা, পানি ও বর্জ্য শোধনাগার, সড়ক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এছাড়া সবুজায়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। পরিবেশের ওপর যাতে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে, তার জন্য পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

আরও বলা হয়, এই জোনে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। জোনটির সফল বাস্তবায়নের ফলে প্রায় ৬০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রাথমিকভাবে এই জোনে বিভিন্ন ভারী শিল্প, পেট্রো-কেমিক্যাল রিফাইনারি, পেপার ও বোর্ড, ফার্মাসিউটিক্যালস, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য, পিভিসি, গার্মেন্টস, কেমিক্যাল, প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেজিং ও স্টিলসহ বৈচিত্র্যময় পণ্য প্রস্তুত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

বেজা সূত্রমতে, ইতঃপূর্বে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আওতায় তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তা হল-মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন (৮০ শতাংশ জমি বরাদ্দ সম্পন্ন), মেঘনা ইকনমিক জোন (শতভাগ জমি বরাদ্দ সম্পন্ন) এবং কুমিল্লা ইকোনমিক জোন (২৫ শতাংশ জমি বরাদ্দ সম্পন্ন)। এসব জোনে সর্বমোট ২৭টি শিল্প কারখানা নির্মিত হয়েছে। যাতে প্রায় আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এছাড়া আরও কিছু শিল্পকারখানা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে।

বেজার হিসাবমতে, বেজার চূড়ান্ত লাইসেন্স বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে আটটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এসব অঞ্চলে মোট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬২টি। এর মধ্যে ৩৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে এবং ২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় প্রায় চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং ৪২ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মোটরসাইকেল, সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, ব্যাগ, পেপার, টিস্যু, খেলনা, বেভারেজ এবং খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন মেঘনা গ্রুপকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ঢাকার কাছে হওয়ায় তিতাস ইকোনমিক জোন দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাবে। আগের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে তিতাস ইকোনমিক জোনেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা জমি বরাদ্দে প্রাধান্য পাবেন। তিনি আরও বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করেন সরকারের সব আইন ও নীতি প্রতিপালন করে তারা যেন পরিকল্পিত শিল্প স্থাপন করেন। শুধু কর অবকাশ বা ইনসেন্টিভ প্যাকেজের কথা চিন্তা না করে বৃহত্তর স্বার্থে সব বিনিয়োগের জন্য সুযোগ সৃষ্টির প্রতি তিনি গুরুত্ব দেন।

অনুষ্ঠানে কুমিল্লা ইকোনমিক জোনের কর্ণধার মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্য প্রস্তুতিতে মেঘনা গ্রুপ সুনামের সঙ্গে কাজ করে এসেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠান দেশ এবং দেশের বাইরের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আগ্রহী।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০