Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 6:53 pm

তিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নজরুল ইসলাম: মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য আমদানি করেছে তিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে ভাইয়া গ্রুপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ কিউ ট্রেডিংও রয়েছে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এসব পণ্য খালাসও করা হয়েছে। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা হয়েছে কাস্টম হাউসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে। লক খুলে পণ্য চালান অবমুক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারাও এতে জড়িত। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে সাড়ে ২৪ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী গত ১০ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রামে মামলা তিনটি দায়ের করেন। এজাহার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ভাইয়া গ্রুপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ কিউ ট্রেডিং জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আট কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০ টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি এ কিউ ট্রেডিংয়ের নামে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে হিসাব খোলেন আব্দুস কুদ্দুস রায়হান। সিঙ্গাপুর থেকে সুইট কর্ন অ্যান্ড বিনস আমদানির জন্য ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর এলসি খোলেন তিনি। পণ্য চালানটি খালাসের জন্য এ কিউ ট্রেডিংয়ের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মজুমদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইকবাল হোসেন মজুমদার ১৪ নভেম্বর কাস্টম হাউস চট্টগ্রামে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। পণ্য চালানটি আমদানির ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অর্থ আত্মসাতের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানটির খালাস কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কাস্টম হাউসকে জানায়। কাস্টম হাউসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে পণ্য চালানটি ১৫ নভেম্বর লক করা হয়। ১৯ ডিসেম্বর অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ইউজার আইডির লক অবমুক্ত করে চালানটি খালাস করে। পণ্য চালানটিতে আমদানি নীতি আদেশ লঙ্ঘন করে ঘোষণাবহির্ভূত উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মেসার্স এ কিউ ট্রেডিংয়ের মালিক আমদানিকারক আব্দুস কুদ্দুস রায়হান, মজুমদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের (সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট) মালিক ইকবাল হোসেন মজুমদার, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল গোফরান ও জহুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, শুল্কায়ন গ্রুপ-১(বি)-এর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাহামুদা আক্তার লিপি, রাজস্ব কর্মকর্তা মেহেরাব আলী, এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলাম জড়িত। মামলায় তাদের সবাইকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস ডি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করে খাঁটি হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে গত ১৭/১০/২০১৮ থেকে ২৬/১২/২০১৮ তারিখের মধ্যে সুইট কর্ন অ্যান্ড বেকিং পাউডারের পরিবর্তে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্ক হারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি ও খালাস করে সরকারি রাজস্ব বাবদ আট কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩২ টাকা ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছে। দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।

এস ডি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও আমদানিকারক নাসরীন রায়হান ও স্মরণিকা শিপিং কাইজেন লিমিটেডের (সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম, স্মরণিকা শিপিং কাইজেন লিমিটেডের পরিচালকদের মধ্যে জাভেদ আহমেদ, তানজিন মোর্শেদ, শরীফ উদ্দিন, আবদুল কাফি ও আনিসুর রহমান রিপন এবং অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল গোফরান ও জহুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম এবং অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জাহিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করে খাঁটি হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে গত ৩১/১০/২০১৮ থেকে ২৬/১২/২০১৮ তারিখের মধ্যে বেকিং পাউডার অ্যান্ড সুইট কর্নের পরিবর্তে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি ও খালাস করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আট কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাৎ করেছে। দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এতে জাহিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক জাহিদুল ইসলাম, মেসার্স লায়লা ট্রেডিং কোম্পানির (সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট) মালিক জসিম উদ্দিন, অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী আব্দুল গোফরান ও জহুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম এবং অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।