চট্টগ্রাম বন্দর

তিন কন্টেইনার পণ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ

রহমত রহমান: চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি কন্টেইনারের পণ্যে রয়েছে তেজস্ক্রিয় পদার্থ। মাবিয়া স্টিল কোম্পানি লিমিটেড, সিটাডেল গ্লোবাল করপোরেশন ও কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলসের (কেএসআরএম) এসব পণ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত হওয়ার এত বছর পরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে। তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকার আশঙ্কায় সম্প্রতি রহিমা গ্রুপের রহিমা ইস্পাত লিমিটেডের স্ক্র্যাপভর্তি আরেকটি কন্টেইনার আটক করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।

শনাক্ত করা তিনটি কন্টেইনারের তেজস্ক্রিয় পদার্থের স্থায়ী ডিসপোজাল এবং রহিমা ইস্পাতের কন্টেইনারের তেজস্ক্রিয় বস্তু শনাক্তে একটি পরমাণু বিশেষজ্ঞ দল ‘রেডিয়েশন সার্ভে’ করেছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিশেষজ্ঞ দল এ সার্ভে করে। এছাড়া বিএসআরএমের কন্টেইনারের পণ্যে তেজস্ক্রিয় বস্তুর বিষয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে এনবিআরকে দেয়া চিঠিতে এসব উল্লেখ করা হয়েছে।

বন্দরের অভ্যন্তরে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে এমন কন্টেইনারগুলোর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চেয়ে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এনবিআর থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে চিঠি দেয়া হয়। নভেম্বরের শেষ সময়ে সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয় কাস্টম হাউস। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি পরমাণু বিশেষজ্ঞ দল সম্প্রতি রেডিয়েশন সার্ভে করে গেছে। কন্টেইনারে থাকা তেজস্ক্রিয় বস্তুর স্থায়ী ডিসপোজালের বিষয়ে তারা দিকনির্দেশনামূলক প্রতিবেদন দেবে। সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এনবিআরকে দেয়া চিঠিতে কাস্টম হাউস উল্লেখ করে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ কার্যালয়ের পাশে তিনটি প্রতিষ্ঠানের তিনটি কন্টেইনারের পণ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে। তিনটি কোম্পানি হলোÑমাবিয়া স্টিল কোম্পানি লিমিটেড, সিটাডেল গ্লোবাল করপোরেশন ও কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম)। তিনটি প্রতিষ্ঠানের কন্টেইনারের পণ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়েছে।

২০ আগস্ট কাস্টম হাউস থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে, তারা যাতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের স্বাস্থ্য, পদার্থ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করে কন্টেইনারগুলোয় তেজস্ক্রিয় পদার্থ স্থায়ীভাবে ডিসপোজালের উদ্যোগ নেয়। এছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে স্বাস্থ্য, পদার্থ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিটের সঙ্গে স্থায়ী ডিসপোজালের জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলোর স্থায়ী ডিসপোজালে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে স্বাস্থ্য, পদার্থ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউনিট কর্তৃক কাস্টম হাউসকে  বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিতে বলা হয়। হাউস থেকে ২৭ আগস্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় কাস্টম হাউস। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি প্রতিনিধিদল বন্দরে অবস্থান করে এ বিষয়ে কারিগরি সহায়তা দেবে। পরে প্রতিনিধিদলের ফি-সহ অন্যান্য ফি জমা দিতে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়। এছাড়া প্রতিনিধিদলকে সার্বিক সহযোগিতা করতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় কাস্টম হাউস। প্রতিনিধিদলের রেডিয়েশন সার্ভে শেষে পরবর্তী দিকনির্দেশনা হাউসকে জানিয়ে দেয়া হবে এবং সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের ইস্পাত খাতের স্বনামধন্য রহিমা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহিমা ইস্পাত লিমিটেড। ঢাকার শ্যামপুর এলাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি অস্ট্রেলিয়া থেকে আটটি কন্টেইনারে দুই লাখ চার হাজার ৬৪০ কেজি স্ক্র্যাপ আমদানি করে। ১৯ অক্টোবর পণ্য খালাসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। শুল্ককর পরিশোধ শেষে ২০ অক্টোবর খালাসের আগে মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ কর্তৃক তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করা হয়। এ সময় একটি কন্টেইনারে রেডিয়েশন অ্যালার্ম বেজে ওঠে।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকতে পারে, এমন সন্দেহ হলে পণ্যসহ কন্টেইনারটি আটক করে মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভের সোর্স ডিটেইন্ড এরিয়ায় রাখা হয়। আগের তিনটি প্রতিষ্ঠানের কন্টেইনারের তেজস্ক্রিয় পদার্থ স্থায়ী ডিসপোজাল এবং রহিমা ইস্পাতের কন্টেইনারে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত ও ব্যবস্থা নিতে ২৭ অক্টোবর আবার বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয় কাস্টম হাউস। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি পরমাণু বিশেষজ্ঞ দল কন্টেইনারে তেজস্ক্রিয় বস্তুর বিষয়ে রেডিয়েশন সার্ভে করেছে।

হাউসের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের (বিএসআরএম) একটি চালানের পণ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ-সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। আইন মেনে পরমাণু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ৪ অক্টোবর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অপরদিকে ২০ অক্টোবর কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ পরিদর্শন করে চারটি কন্টেইনারের বিষয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের মাবিয়া গ্রুপের মাবিয়া স্টিল কোম্পানি লিমিটেড পুরোনো ইস্পাত পণ্যের একটি কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি করে। তবে ভারতে নেয়ার আগে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে একই বছরের ২৯ এপ্রিল কন্টেইনারের পণ্যে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়। পরে শ্রীলঙ্কার বন্দর কর্তৃপক্ষ কন্টেইনারটি চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বন্দরে স্থাপিত মেগাপোর্ট প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ বিজ্ঞানী কন্টেইনার থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থটি আলাদা করেন। আমদানি-রপ্তানিতে এটিই প্রথম শনাক্ত হওয়া তেজস্ক্রিয় পদার্থ, যার নাম রেডিয়াম বেরিলিয়াম।

অপরদিকে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট সিটাডেল গ্লোবাল করপোরেশনের একটি চালানে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটি জিংক অক্সাইডের একটি চালান চীনে রপ্তানির সময় তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত হয়। তেজস্ক্রিয় পদার্থটির নাম সিজিয়াম-১৩৭। ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আমদানির সময় কবির স্টিল রি-রোলিং মিলসের (কেএসআরএম) একটি পুরোনো লোহার পণ্য চালানে তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হয়, যার নাম সিজিয়াম-১৩৭। প্রথম শনাক্ত হওয়া তেজস্ক্রিয় পদার্থটি মেগাপোর্ট কার্যালয়ের পাশে একটি বাক্সে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। এছাড়া অন্য দুটি কন্টেইনারও কার্যালয়ের পাশে রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০