আতাউর রহমান: গত সপ্তাহ সূচক ও লেনদেন পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। এ সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব সূচক কমেছে। সেই সঙ্গে লেনদেন কমেছে ৪৪৫ কোটি টাকা বা ৮ শতাংশের বেশি। অপর দিকে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে পতনের মধ্যে লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। এছাড়া প্রকৌশল এবং বিবিধ খাতেও লেনদেন বেশি হয়েছে। তবে খাতগুলোতে লেনদেন বেশি হলেও বেশিরভাগ শেয়ার দর কমেছে। এর ফলে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন শেষে খাতগুলোতে দর পতন হয়েছে। গত সপ্তাহে তিনটি খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২ হাজার ৪৪০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪১ টাকা বা ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। তবে খাতগুলোর শেয়ারে মোট ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ দর পতন হয়েছে।
বাজার পর্যলোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহেজুড়ে ওষুধ খাতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ বা ১ হাজার ৮৭ কোটি ৪০ লাখ ৭৫ হাজার ৭২১ টাকা লেনদেন হয়েছে। যা বাকি সব খাতের থেকে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু গত সপ্তাহে খাতটির শেয়ারে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ দর পতন হয়েছে। এছাড়া সপ্তাহের চার কার্যদিবসের মধ্যে দুই কার্যদিবস এ খাতের শেয়ারের দর পতন হয়েছে। তবে গত সপ্তাহের তিন কার্যদিবস খাতটি লেনদেনের শীর্ষে ছিল। এদিকে লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনর ১৪ শতাংশ বা ৬৭৬ কোটি ৬০ লাখ ৯১ হজার ৫০ টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহে খাতটির শেয়ারে দশমিক ৮০ শতাংশ দর পতন হয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে খাতটি লেনদেনে শীর্ষ পাঁচের মধ্যে থাকলেও দুই কার্যদিবস শেয়ারের দর পতন হয়েছে। আর এক কার্যদিবস শেয়ার দর কমা-বাড়ার কোনো পরিবর্তন হয়নি।
অপরদিকে লেনদেনে তৃতীয় স্থানে থাকা বিবিধ খাতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশ বা ৬৭৬ কোটি ৬০ লাখ ৯১ হজার ৫০ টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু খাতটির শেয়ারে গত সপ্তাহে ২ শতাংশ দর কমেছে। এছাড়া সপ্তাহজুড়ে খাতটি লেনদেনে শীর্ষ তিনে অবস্থান করলেও দুই কার্যদিবস শেয়ার দর কমেছে। এদিকে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর কমেছে আইটি খাতে। গত সপ্তাহে আইটি খাতে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা সিমেন্ট এবং আর্থিক খাতে যথাক্রমে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং ২ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
এদিকে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে পাট খাতে। পাট খাতে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে এবং খাতটিতে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের দশমিক ৬০ শতাংশ বা ২৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে থাকা কাগজ ও মুদ্রণ খাতে গত সপ্তাহে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বা ৪১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এ খাতে লেনদেন হয়েছে। ৪ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়ে গত সপ্তাহে তৃতীয় স্থানে ছিল ভ্রমণ ও অবকাশ খাত। গত সপ্তাহে খাতটিতে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ১৮৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৪ হাজার ৮৩২ কোটি ৯২ লাখ ২৫ হাজার ৪২৯ টাকার লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ২৭৮ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৯৮ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেনে ৪৪৫ কোটি ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ০৬৯ টাকা কমেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৯৪ দশমিক ২৫ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫৩ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪১৯ দশমিক ৭০ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩০৮ দশমিক ০৬ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৫টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির বা ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশের, কমেছে ১১৮টির বা ৩০ দশমিক ৬৫ শতাংশের এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬৬টির বা ৪৩ দশমিক ১২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।