Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:21 am

তিন জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডের কার্যক্রম চার মাস বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে সাতটি দুর্ঘটনায় পাঁচজন শ্রমিক নিহত এবং তিনজন আহত হন। আর চলতি বছরের মোট ১৩ জন মারা যান, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। এ ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি কমিটিও গঠন করে। আর এ কমিটিগুলো প্রতিবেদনে এসএন করপোরেশন, খাজা শিপব্রেকিং এবং মাদার স্টিল নামে তিনটি জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠানকে চার মাসের জন্য জাহাজ কাটা বন্ধ রাখার আদেশ দেয়।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অর্ধ-শতাধিক জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে প্রতি বছর দুই শতাধিক জাহাজ ভাঙা হয়। কিন্তু এসব ইয়ার্ডের কর্মপরিবেশ উন্নত ও মানসম্মত না হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডে সাতটি দুর্ঘটনায় পাঁচজন শ্রমিক নিহত এবং তিনজন আহত হন। আর চলতি বছরের মোট ১৩ জন মারা যায়, যা এ যাবত কালের সর্বোচ্চ। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। এসব ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে শিল্প মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটিগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসএন করপোরেশন, খাজা শিপব্রেকিং এবং মাদার স্টিলের কার্যক্রম চার মাস বন্ধ রাখার আদেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) শিল্পব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী পুরোনো জাহাজের ডাম্পিংয়ের অন্যতম শীর্ষ গন্তব্য বাংলাদেশ। বিশ্বের মোট এক তৃতীয়াংশ মেয়াদাত্তীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ, দূষিত জাহাজগুলো হাতবদল হয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অর্ধ-শতাধিক জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ডে বছরের দুই শতাধিক জাহাজ ভাঙা হয়। কিন্তু এসব ইয়ার্ডের দক্ষ শ্রমিকের অভাব, নিরাপত্তা সরঞ্জামের সংকট, কর্মপরিবেশ উন্নত ও মানসম্মত না হওয়ায় একাধিক দুঘর্টনায় শ্রমিক নিহত ও আহত হয়। গত এক মাসে পাঁচজন শ্রমিক মারা যায়। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে তসলিম নামের ৩৬ বছর বয়সীর একজন শ্রমিক লোহার প্লেটের আঘাতে নিহত হন। একইভাবে জাহাজ ভাঙা ব্যবসায়ী ও ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরীর মালিকানাধীন এসএন করপোরেশেনে হবিগঞ্জের লিটন পাল নামের ২৮ বছরের শ্রমিক মারা যান গত ১৮ সেপ্টেম্বর। এছাড়া গত ১৪ সেপ্টেম্বর মিডল্যান্ড ব্যাংকের পরিচালক মাস্টার আবুল কাশেমের মালিকানাধীন মাদার স্টিল লিমিটেডে সিলিন্ডার ব্লাস্টে নাজিম উদ্দিন (৩৫), ২৫ আগস্ট তাইহুয়া স্টিল এন্টারপ্রাইজের রংপুরের মোহাম্মদ আলী (২৭) এবং ২১ আগস্ট মোস্তফা হাকিম গ্রুপের জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন আয়রন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ভোলা রাকিম উদ্দিন নামে একজন লোহার প্লেটের আঘাতে নিহত হন। আর সব মিলিয়ে চলতি বছরের মোট ১৩ জন মারা যায়। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। অথচ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি মাত্র গ্রিনইয়ার্ড রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ফোনালাপে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সাবেক সহসভাপতি এবং মাদার স্টিল লিমিটেডের পরিচালক মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, মৃত্যু তো অপ্রত্যাশিত। সে শ্রমিক হোক, কিংবা আমি হই। আর জাহাজ ভাঙা শিল্পে শ্রমিকদের মৃত্যুর হার আগের চেয়েও অনেক কম। আর একজন শ্রমিক মারা গেলে শ্রম আইনে দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলা আছে। এক্ষেত্রে আমরা নিহত শ্রমিকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেই। এনজিওগুলো তো বহু কথা বলবে। একটা গ্রিন শিপইয়ার্ড করতে গেলে ৫০-১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ টাকা আমাদের জোগান দেয়া সম্ভব নয়। একসময় ১২৫টি ইয়ার্ড ছিল, এখন ৩০-৩৫টা ইয়ার্ডে কাজ চলে, তাহলে বোঝেন কী অবস্থা যাচ্ছে। এর জন্য সরকারিভাবে কিংবা বিদেশি তহবিলে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণসুবিধা দিতে হবে। এছাড়া দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে।

এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়া, বিরা, বেখা এবং বিআইএম) মো. জাফর উল্লাহ বলেন, শ্রমিক দুঘর্টনায় তিনটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড চার মাস বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সময়ে তারা কোনো জাহাজ কাটতে পারবে না। এখন আমি অফিসের বাইরে আছি। তাই বিস্তারিত বলতে পারছি না।