তিন দিনের ছুটি মাসের শেষ: ক্রেতা কম তবুও বাজার চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক বাজারে ব্যস্ততা ছিল না। ছিল না তেমন সরগোল, হাঁকডাক। বেচা-কেনা সবখানেই ঢিলেঢালা ভাব। তবুও বাজারে পণ্যের দাম কমেনি, উল্টো চড়া। এতে ক্রেতার তুলনায় বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির আমদানি বেশি হলেও দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ক্রেতার। আর ছোট মাছের দাম বৃদ্ধির কথা বলছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই।

টানা তিনদিন ছুটির মধ্যে গতকালের চিত্র এটি। গত বৃহস্পতিবার থেকেই এই ছুটিতে নগরী ছেড়েছে অনেকে। আবার যারা আছেন তারাও মাসের শেষের দিক হওয়াতে বাজারের ফর্দ ছোটো করেছেন। সব মিলে স্বাধীনতা দিবসের সরকারি ছুটির সঙ্গে শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটি যোগ হয়ে তিন দিনের ছুটি রাজধানীর বাজারে এ ঢিলেঢালা আমেজ সৃষ্টি করেছে।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে ছোটো মাছ ও সবজির দাম। এ ছাড়া গরু খাসির মাংস আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। অনেক বাজারে আবার দেশি ও কক মুরগি কিনতে আগের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তবে অপরিবর্তিত দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। এছাড়া বাজারে মুদি ও অন্যান্য পণ্যের দামে তেমন তারতম্য নেই। রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, রামপুরা, খিলগাঁও তালতলা ও কারওয়ান কাঁচাবাজার ঘুরে এমনটা জানা গেছে।

গতকাল আগের সপ্তাহের চেয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১৫ টাকা। যেখানে বেগুন গত সপ্তাহে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল গতকাল তা ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে  ১০ টাকা বেড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শালগম ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। এছাড়া করলা প্রতি কেজি আগে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে দাম বেড়ে হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এছাড়া বাজারে শিম প্রকারভেদে ৩০-৫০ টাকা, টমেটো ৩০-৪০ টাকা, গাজর ২০-৩২ টাকা, শসা ৩০-৪০ টাকা, পেঁপে ২০-৩০ টাকা, বরবটি ৫৫-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৬০ টাকা, কচুরলতি ৪০-৫০ টাকা, মটরশুঁটি ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

অপরদিকে বাজারে কাঁচামরিচের কেজি ৬০-৮০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রকারভেদে কেজিপ্রতি ২৪-৩০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারে বিক্রেতা গনেশ বাবু বলছেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে এ বাড়তি দাম। বাজারে নতুন সবজি আসা শুরু করলে দাম কিছুটা কমে যাবে। তবে ক্রেতা কম বলে অনেক পণ্য আগের তুলনায় কম দামেও বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

বিভিন্ন মাছের বাজারে ক্রেতা অনাগোনা কমেছে বেশি। তালতলা বাজারে মাছ বিক্রেতা শরিফুল বলেন, ক্রেতাই নেই। সবাই বাড়ি গেছে। সকালে কিছু ক্রেতা থাকলেও এখন দিন বাড়ার সাথে সঙ্গে ফাঁকা হচ্ছে বাজার। এতে প্রভাব পড়ছে মাছের দামেও।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বড় আকারের মাছ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে, তবে ছোট মাছের দাম বেশি। বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি দেশি রুই-কাতলা-মৃগেল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া-পাঙ্গাস, সিলভার কার্পের মতো মাছ ১২০ টাকা থেকে ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হচ্ছে।

এদিকে বাজারে বাইলা মাছ প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৪০০, বাইন মাছ ৪০০ থেকে ৫০০, গলদা চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৮০০, পুঁটি ১৮০ থেকে ২০০, পোয়া ৪০০ থেকে ৪৫০, মলা ৩২০ থেকে ৩০০, পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০, শিং ৪০০ থেকে ৭০০, শোল মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের তুলনায় ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি।

এছাড়া বিভিন্ন বাজারে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এ সপ্তাহে ডিমের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান দোকানিরা। এখন ফার্মের লাল ডিম প্রতি হালি ৩০ থেকে ৩২ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিম ৪৬ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম আগের মতোই ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। তবে এক কেজি ওজনের প্রতি পিস কক মুরগি ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা ও দেশি মুরগি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সিরাজুল নামের এক মুরগি বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেশি বলেই শুধু কক ও দেশি মুরগির দাম বেশি। তবে সরবরাহ বাড়লে তা স্বাভাবিক হবে।

এদিকে বাজারে দুই সপ্তাহ ধরেই বাড়তি চালের দাম। মৌসুমের শেষ হওয়াতে সরবরাহ কম বলে দাম বেশি জানান অনেক পাইকারি বিক্রেতা। আবার অনেকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মিলারদের কারসাজিকে দায়ী করছেন। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল ৩৮-৪০ টাকা, পারিজা ৪০-৪২ টাকা, মিনিকেট ৫০-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৪৬-৫২ টাকা, বাসমতি ৫৬-৬০ টাকা, কাটারিভোগ ৭৪-৮০ টাকা এবং পোলাও চাল ৭০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০