নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানির ঈদের তিন দিনে ট্যানারি ব্যবসায়ীররা সরাসরি সাড়ে পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন, যা গত বছরের চেয়ে দেড় লাখ বেশি। বিটিএ (বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি শাহিন আহমেদ গতকাল বুধবার ধানমন্ডি ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এ বছর কোরবানির ঈদের সময় ট্যানারি মালিকরা সরাসরি সাড়ে পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া কিনেছেন। এর মধ্যে ঈদের দিন সংগ্রহ করেছেন সাড়ে তিন লাখ চামড়া। বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে ট্যানারিগুলো সারাদেশের চামড়ার আড়ত এবং হাট থেকে ‘লবণযুক্ত চামড়া’ কেনার কাজ শুরু করবে।
তিনি বলেন, এখন লবণযুক্ত চামড়া কেনার মধ্য দিয়ে এ বছর ট্যানারি মালিকরা ৯০ থেকে ৯৫ লাখ গরু, মহিষ, ছাগল, খাসি ও ভেড়ার চামড়া সংগ্রহ করবেন।
গত বছর ট্যানারি মালিকেরা কোরবানি ঈদের পর তিন লাখ কাঁচা চামড়া কিনেছিলেন বলে জানান শাহিন। সাধারণত কোরবানির চামড়া বড় অংশ লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা। পাশাপাশি ট্যানারি মালিকরাও সরাসরি কিছু কাঁচা চামড়া কেনেন।
সরকারের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এবার ঈদুল আজহার দিন সারাদেশে কোরবানি হয়েছে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু, যা গতবারের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। সরকারের বেঁধে দেয়া দর অনুযায়ী ট্যানারিগুলো এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কিনছে ৪৭ থেকে ৫২ টাকায়। আর ঢাকার বাইরে এই দাম ৪০ থেকে ৪৪ টাকা।
লবণযুক্ত খাসির চামড়া সারাদেশে ১৮ থেকে ২০ টাকায় কিনেছে ট্যানারি। আর ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ঈদের পর থেকে চামড়া বিক্রি করে লোকসানের কথা বলেছেন দেশের বিভিন্ন জেলার মৌসুমি বিক্রেতারা, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে পাইকার বা আড়তাদারদের কাছে বিক্রি করেন। দাম না পাওয়ায় ছাগলের চামড়া ভাগাড়ে ফেলার খবরও এসেছে।
চামড়াসংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্তগুলোকে ‘যুগোপযোগী’ বর্ণনা করে শাহিন আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসকের সমন্বয়ে উপজেলা পর্যায়ে মনিংটরিং সেল গঠন করায় ‘সঠিকভাবে’ চামড়া সংগ্রহের কাজ চলছে।
ঈদের পর সাত দিন রাজধানীতে চামড়া ঢুকতে না দেয়ার সিদ্ধান্তকেও সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকদের সেরকম সক্ষমতা নেই যে দু-এক দিনের ভেতরে লাখ লাখ চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করবেন। সে কারণে বিভিন্ন জেলায় চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
চামড়ার দাম নিয়ে এক প্রশ্নে বিটিএ সভাপতি বলেন, চামড়াজাত পণ্য বা চামড়ার দর বাইরের দেশগুলোয় কমেনি। আমরা যে চামড়া উৎপাদন করছি, সেই চামড়া আমরা ব্র্যান্ড বায়ারদের কাছে সেল করতে পারছি না। আমরা নন-কমপ্লায়েন্ট বায়ার, অর্থাৎ চায়নিজ বায়ারের কাছে যে পণ্যের দাম দুই ডলার সেটা আমরা এক ডলারে বিক্রি করছি। অধিকাংশ ট্যানারি মালিক ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে লোকসানে চামড়াগুলো সেল করছে।
তিনি জানান, ২০১৬ সালের আগে ঢাকায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরেও বড় আকারের একটি গরুর চামড়া বিক্রি হতো। পরের বছর ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিশিল্প সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর হলে পরিস্থিতি বদলে যায়।
খাসি বা ছাগলের চামড়ার দাম না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে এক প্রশ্নে শাহিন বলেন, ছাগলের চামড়ার ডিমান্ড বিশ্বব্যাপী কমেছে। আমরা হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিফট করেছি ২০১৭ সালে। সেখানে মূলত খাসি ও ছাগলের চামড়ার ইউনিট ছিল। সেই ইউনিটগুলোকে আমরা নিতে পারিনি। সাভারে আমাদের পাঁচ থেকে ছয়টি ইন্ডাস্ট্রি আছে, যারা ছাগল ও খাসির চামড়া প্রসেস করে। এটার একটা বিরূপ প্রভাব কয়েক বছর ধরে পড়েছে।
শাহিন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োজন হয়। ‘সুপারভাইজড বন্ড’ সুবিধার আওতায় ট্যানারিগুলো সেই কেমিক্যাল সংগ্রহ করে। ট্যানারি শিল্পের স্বার্থে সুপারভাইজড বন্ড বহাল রাখা এবং এর আওতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এই সুবিধা বাড়াতে বিটিএ এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আবেদন করেছে। আবেদনটি বিবেচনার জন্য আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই।
সংবাদ সম্মেলনে চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপির (কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার) ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ, চামড়া খাতে ঋণের তিন বছরের সুদ মওকুফ, জরুরি ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরেরে ছাড়পত্র নবায়ন, এলডাব্লিউজি সনদ পাওয়ার পদক্ষেপসহ চামড়াশিল্প নগরীর ভূমি বরাদ্দ নীতিমালা হালনাগাদ করা দাবিও তুলে ধরেন বিটিএ সভাপতি। সংগঠনের কর্মকর্তা ও ট্যানারি মালিকরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।