Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 6:10 pm

তিন দিবস ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন গদখালীর ফুলচাষিরা

মীর কামরুজ্জামান, যশোর: করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে গত দু’বছর গুনতে হয়েছে লোকসান। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালী ও পানিসারা এলাকার ফুলচাষিদের। তারপরও আশা ছাড়েননি তারা। সামনে তিনটি দিবস। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে গদখালী ও পানিসারা এলাকার ফুলচাষিদের। বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে নতুন আশা ও নতুন স্বপ্নে বিভোর এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এসব দিবসকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন গদখালীর ফুলচাষিরা। বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় এই তিন দিবসে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন তারা।

মূলত, খ্রিষ্টীয় নববর্ষ, বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাসহ বিশেষ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা ফুল উৎপাদন করেন। বিশেষ এসব দিবসকে টার্গেট করে বছরের অক্টোবর থেকে এ এলাকার ফুলচাষিরা নানা জাতের ফুল লাগানো ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত। এ সময় ফুলের দাম থাকে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুলক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। প্রয়োজনীয় পানি দেয়া, স্প্রে করা, আগাছা নিড়ানো, মরা-রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলাসহ ক্ষেত পরিচর্যায় তাদের দম ফেলার সময় নেই। এর মধ্যে গোলাপ, জারবেরা, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, টিউলিপ ও লিলিয়াম ফুলের বাড়তি পরিচর্যা করছেন চাষিরা। তাদের আশা, ফেব্রুয়ারি মাসের দিবসগুলো ঘিরে ফুলের চাহিদা বাড়বে এবং ভালো দাম পাবেন। পাশাপাশি ক্ষেত থেকে ফুল তুলে নিয়ে ছুটছেন গদখালী ফুলবাজারে। দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও হাজির হচ্ছেন সেখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর গোটা এলাকা। ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরাও অন্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল

কিনছেন। একইসঙ্গে বেশি দাম পাওয়ায় ফুলচাষিরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সব মিলিয়ে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে।

ফুলচাষিরা বলছেন, এবার এই তিনটি দিবস ঘিরে সারাদেশে দেড় থেকে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। এর মধ্যে পানিসারা ও গদখালীর ফুলচাষিরা ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই অঞ্চলের চাষিরা চলতি মাসের দিবসগুলোতে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন।

গদখালী ফুলবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমজমাট ফুলের বাজারে গোলাপ ফুলপ্রতি পিস ৮-১০ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ২৫-৩০, রজনীগন্ধা স্টিক ৮-১০, গ্লাডিওলাস ফুল রং ভেদে ৮-১৫ ও জারবেরা প্রতিটি ১০-১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চন্দ্রমল্লিকা ৩-৪ টাকা, গাঁদা প্রতি হাজার সাড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, এখন দাম একরকম থাকলেও বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে গোলাপ, জারবেরার দাম বাড়বে। সে ক্ষেত্রে গোলাপের পিস ১৫-২০ টাকা এবং জারবেরা ২০-২২ টাকা হতে পারে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত ৭ শতাধিক হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে ফুলচাষ হয়।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনাভাইরাস ও আম্পান এই অঞ্চলের ফুল সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। ফুল পরিচর্যা ও বিক্রির জন্য প্রতিবারের মতো এবারও গদখালী-পানিসারাসহ সারাদেশের চাষিদের প্রস্তুতি রয়েছে। মূলত ফেব্রুয়ারির তিনটি দিবস ঘিরে ফুল উৎপাদন ও পরিচর্যা করেন চাষিরা। তিন দিবসে গদখালী ও পানিসারার চাষিরা ৬০-৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছি। তারপরও সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় চাষিরা ফুলের দাম নির্ধারণে হিমশিম খাচ্ছেন। উৎপাদনসামগ্রীর দাম কমিয়ে যদি ফুলের দাম সমন্বয় করা যেত, তাহলে আরও বেশি লাভবান হতেন চাষিরা।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথাসময়ে শীত পড়ায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণও অনেক কম। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আশা করছি, বসন্ত, ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে এই অঞ্চলের চাষিরা এবার ১০০ কোটি টাকা ফুল বিক্রি করতে পারবেন। এছাড়া টিউলিপ আর লিলিয়ামের মতো দামি ফুলও এবার বাজারে উঠবে।