তিন প্রতিমন্ত্রী, ৬৯ সংসদ সদস্য পেলেন না মনোনয়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: একাদশ সংসদ নির্বাচন ও পরে উপনির্বাচনে জিতে এসেছেন, এমন ৬৯ জন সংসদ সদস্যকে এবার মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ।

এদের মধ্যে চারজন নানা সময় মন্ত্রিসভায় ছিলেন। এখনও মন্ত্রিসভায় আছেন, এমন তিনজনও পাননি মনোনয়ন। বাদ পড়া প্রতিমন্ত্রীরা হলেন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে গতকাল রোববার। গত নির্বাচনে মহাজোটের শরিকদের ছাড় দেয়া হয়েছিল, এমন আসনগুলোর মধ্যে কেবল দুটিতে প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন দল। বাকি সবগুলোতেই মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘জনপ্রিয়তা, দক্ষতা ও যোগ্যতার মানদণ্ডে যারা এগিয়ে আছেন, তাদেরই মনোনয়ন দিয়েছে মনোনয়ন বোর্ড।’ শতাধিক প্রার্থী বদল এবং ৬৯ জন সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন না দেয়ার কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনেই মানদণ্ডটা নতুন করে যাচাই করা হয়। যার জন্য এই পরিবর্তন।’ এবার সবচেয়ে বেশি ১৩ জন সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন ঢাকা বিভাগে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ জন বাদ পড়েছেন খুলনা বিভাগে।

রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন করে, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ৬ জন এবং বরিশাল বিভাগে বাদ পড়েছেন মোট তিন জন সংসদ সদস্য। তিন প্রতিমন্ত্রী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন কুড়িগ্রাম-৪ আসনে এবার নৌকা মার্কা পাননি। তার জায়গায় বিপ্লব হাসানকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানও এবার খুলনা-৩ আসনে মনোনয়ন পাননি। তার জায়গায় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনকে বেছে নেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ-৫ আসনে গত নির্বাচনে জয় পাওয়া কে এম খালিদকেও এবার মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তার আসনে লড়বেন আব্দুল হাই আকন্দ। জামালপুর-৪ আসনের মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের পর দলীয় পদও হারিয়েছিলেন। চলতি বছর তাকে ক্ষমা করে দলের সদস্যপদ ফিরিয়ে দেয়া হলেও মনোনয়নের জন্য আর বিবেচনা করা হয়নি। তার আসনে লড়বেন মো. মাহবুবুর রহমান।

সবচেয়ে বেশি বাদ ঢাকা বিভাগে : এই বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জে একটি করে আসনে প্রার্থী পাল্টানো হয়েছে।  টাঙ্গাইল-৮ আসনে জোয়াহেরুল ইসলামের জায়গায় অনুপম শাহজাহান জয়, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে নূর মোহাম্মদের জায়গায় আবদুল কাহার আকন্দ, মানিকগঞ্জ-১ আসনে নাইমুর রহমান দুর্জয়ের আসনে মো. আব্দুস সালাম, গাজীপুর-৩ আসনে ইকবাল হোসেনের জায়গায় রুমানা আলী, নরসিংদী-৩ আসনে জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনের জায়গায় ফজলে রাব্বী খানকে বেছে নেয়া হয়েছে।

ফরিদপুরে প্রার্থী পাল্টেছে দুটি। ফরিদপুর-১ আসনে মঞ্জুর হোসেনের জায়গায় মো. আবদুর রহমান এবং ফরিদপুর-৩ আসনে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের জায়গায় লড়বেন শামীম হক। এর মধ্যে ঢাকা-৫ আসনে কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর জায়গায় হারুনুর রশীদ মুন্না, ঢাকা-৭ আসনে হাজী সেলিমের জায়গায় মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম, ঢাকা-১০ আসনে মো. শফিউল ইসলামের জায়গায় ফেরদৌস আহমেদ, ঢাকা-১১ আসনে এ কে এম রহমতুল্লাহর জায়গায় মোহাম্মদ ওয়াকিল উদ্দিন, ঢাকা-১৩ আসনে সাদেক খানের জায়গায় জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং ঢাকা-১৪ আসনে আগাখান মিন্টুর আসনে লড়বেন মো. মাইনুল হোসেন খান।

চট্টগ্রাম বিভাগে বাদ যারা :  চট্টগ্রামে তিনজন এমপিকে বাদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম-১ আসনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের আসনে এবার লড়বেন তার ছেলে মাহাবুব উর রহমান। চট্টগ্রাম-৪ আসনে দিদারুল আলমের আসনে এস এম আল মামুন এবং চট্টগ্রাম-১২ আসনে সামশুল হক চৌধুরীর আসনে নৌকা পাচ্ছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে এবাদুল করিমের আসনে ফয়জুর রহমান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে এ. বি. তাজুল ইসলামের আসনে বেছে নেয়া হয়েছে মো. আবদুস সবুরকে। চাঁদপুর-১ আসনে মহিউদ্দীন খান আলমগীরের জায়গায় সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুর-২ আসনে মো. নুরুল আমিনের আসনে লড়বেন মোফাজ্জল মোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী মায়া।

এছাড়া কুমিল্লা-৮ আসনে নাছিমুল আলম চৌধুরীর আসনে আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন, নোয়াখালী-৬ আসনে বেগম আয়েশা ফেরদাউসের জায়গায় তার স্বামী মোহাম্মদ আলী এবং কক্সবাজার-১ আসনে জাফর আলমের আসনে বেছে নেয়া হয়েছে সালাহ উদ্দীন আহমদ।

রংপুর বিভাগে যারা বাদ: পঞ্চগড়-১ আসনে মজাহারুল হক প্রধানের জায়গায় মো. নাইমুজ্জামান ভুঁইয়া, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে দবিরুল ইসলামের জায়গায় মাজহারুল ইসলাম, রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের কোষাধক্ষ্য এইচ এন আশিকুর রহমানের জায়গায় তার ছেলে রাশেক রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে এম এ মতিনের জায়গায় সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জাকির হোসেনের জায়গায় বিপ্লব হাসান, গাইবান্ধা-৩ আসনে ইউনুস আলী সরকারের আসনে উম্মে কুলসুম স্মৃতি, গাইবান্ধা-৪ আসনে মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর আসনে নৌকা নিয়ে লড়বেন আবুল কালাম আজাদ।

রাজশাহী বিভাগে যেসব এমপি পেলেন না মনোনয়ন : এই বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে বগুড়া-৫ আসনে হাবিবর রহমানের জায়গায় মজিবুর রহমান মজনুকে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। নওগাঁর ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে প্রার্থী পাল্টেছে আওয়ামী লীগ। নওগাঁ-৩ আসনে ছলিম উদ্দীন তরফদারের জায়গায় সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং নওগাঁ-৪ আসনে মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের জায়গায় বেছে নেয়া হয়েছে মো. নাহিদ মোর্শেদকে। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের পাঁচ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মনোনয়ন পাননি তিনজনই। এরা হলেন রাজশাহী-৩ আসনের আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক ও রাজশাহী-৫ আসনের মনসুর রহমান। এই তিন আসনে নৌকা নিয়ে লড়বেন যথাক্রমে মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ, মো. আবুল কালাম আজাদ ও মো. আবদুল ওয়াদুদ। সিরাজগঞ্জের ছয়জন এমপির মধ্যে মনোনয়ন পাননি তিনজনই। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে হাবিবে মিল্লাতের জায়গায় মোছা. জান্নাত আরা হেনরী, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে তানভীর ইমামের জায়গায় মো. শফিকুল ইসলাম এবং সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা জাহানের জায়গায় বেছে নেয়া হয়েছে চয়ন ইসলামকে, পাবনায় প্রার্থী পাল্টেছে একটিই। ৪ আসনে মো. নুরুজ্জামান বিশ্বাসের আসনে নৌকা পেয়েছেন গালিবুর রহমান শরীফ।

খুলনা বিভাগ বাদ যারা : মেহেরপুর-২ আসনে সাহিদুজ্জামান খোকনের আসনে আবু সালেদ মো. নাজমুল হক, ঝিনাইদহ-৩ আসনে শফিকুল আজম খানের আসনে মো. সালাহ উদ্দিন মিয়াজী পেয়েছেন মনোনয়ন। যশোরের দুটি আসনে প্রার্থী পাল্টেছে আওয়ামী লীগ। যশোর-২ আসনে নাসির উদ্দিনের আসনে মো. তৌহিদুজজমান এবং যশোর-৪ আসনে রণজিত কুমার রায়ের আসনে লড়বেন এনামুল হক বাবুল।

মাগুরা-১ আসনে সাইফুজ্জামান শিখরকে পাল্টে আওয়ামী লীগ নৌকা দিয়েছে সাকিব আল হাসানকে।

বাগেরহাট-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এএইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আমিরুল আলম মিলনকে প্রতীক দেবে না দল।

সিলেট বিভাগে যারা বাদ: সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে প্রার্থী বদল হয়েছে একটিতে। সিলেট-৫ আসনে হাফিজ আহমেদ মজুমদারের জায়গায় মাসুক উদ্দিন আহমদ নৌকা নিয়ে লড়বেন। সুনামগঞ্জ-১ আসনে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মনোনয়ন পাননি। নৌকা পাচ্ছেন রনজিত চন্দ্র সরকার। সুনামগঞ্জ-২ আসনে প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তকেও বাদ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন পেয়েছেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ। হবিগঞ্জে আসন পাল্টেছে দুটি। এর মধ্যে হবিগঞ্জ-১ আসনে গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের জায়গায় মো. মুশফিক হোসেন চৌধুরী এবং হবিগঞ্জ-২ আসনে আব্দুল মজিদ খানের আসনে প্রার্থী করা হয়েছে ময়েজ উদ্দিন শরীফকে।

মৌলভীবাজার-৩ আসনে এবার নৌকা নিয়ে লড়বেন মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নেছার আহমদ।

বরিশাল বিভাগে যারা বাদ : বরিশাল জেলার দুজন সংসদ সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। বরিশাল-২ আসনে শাহে আলমের জায়গায় লড়বেন তালুকদার মো. ইউনুস। বহুল আলোচিত বরিশাল-৪ আসনে পংকজ নাথকেও মনোনয়ন দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন সাবেক নেতা মহিউদ্দিন আহমেদের মেয়ে শাম্মী আহমেদ। বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমনও মনোনয়ন পাননি। এই আসনে লড়বেন সুলতানা নাদিরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০