নজরুল ইসলাম: মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে তিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। শিল্পপণ্যের নামে আমদানি করা হয়েছে উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট। জালিয়াতি ও ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করে তা সঠিক হিসেবে ব্যবহার করে খালাসও করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলোÑএসপি ইন্টারন্যাশনাল, খান এন্টারপ্রাইজ ও এসএএম (স্যাম) ইন্টারন্যাশনাল। তাদের পক্ষে পণ্য খালাস করতে বিল অব এন্ট্রি জমা দিয়েছে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের আলী মোস্তফা কমপ্লেক্সের লাবনী এন্টারপ্রাইজ। এসব জালিয়াতির সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পাঁচ কর্মচারীর জড়িত থাকার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
তিনটি প্রতিষ্ঠান মিলে সরকারের মোট ২৪ কোটি ৪৬ লাখ আট হাজার ৬১০ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এসব ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিনটি মামলা দায়ের করেছে। উপপরিচালক নারগিস সুলতানা গত ৯ মার্চ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এসব মামলা দায়ের করে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মিটফোর্ড রোডের চকবাজারের বিসমিল্লাহ টাওয়ারে ব্যবসা করে এসপি ইন্টারন্যাশনাল। এটির মালিক মোহাম্মদ সেলিম। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার চকমোগলটুলী শাখায় একটি হিসাব খোলেন। মালয়েশিয়া থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টিম আয়রন উইথ স্ট্যান্ডার্ড অ্যাকসেসোরিজ আমদানির জন্য ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর এলসি খোলেন। পণ্য চালান খালাসের জন্য চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের আলী মোস্তফা কমপ্লেক্সের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লাবনী এন্টারপ্রাইজের তিন অংশীদার রাশেদ খান, মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও আরিফুর রহমান ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন।
মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানির মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকির তথ্য পেয়ে কাস্টম হাউসের অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে পণ্য চালানটি ‘ডু নট রিলিজ’ মর্মে লক করা হয়। কিন্তু ১৯ ডিসেম্বর গেট ভেরিফিকেশন দিয়ে চালানটি খালাস করা হয়। এতে মোট আট কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৫২ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়।
দুদক তার অনুসন্ধানে এর সঙ্গে আব্দুল গোফরান ও জহুরুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেয়েছে। এতে রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হকের ইউজার আইডি অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হকের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। এছাড়া লক করা পণ্য চালানটি খালাসের আগে কায়িক পরীক্ষা না করে অবৈধভাবে খালাসে সহযোগিতা করেছেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হক।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখার কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, এআইআর শাখার উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামও এর সঙ্গে জড়িত। এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
গাজীপুরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক রাশেদুল হোসেন খান রাজিব। তার বাড়ি গাজীপুরের কাশিমপুরে। তিনি ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গাজীপুরের কোনাবাড়ী শাখায় একটি হিসাব খোলেন। চীন থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টিম আয়রন উইথ স্ট্যান্ডার্ড অ্যাকসেসোরিজ আমদানির জন্য ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর এলসি খোলেন। জালিয়াতি ও ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করে তা সঠিক হিসেবে ব্যবহার করেন। মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি ও খালাস করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি মোট আট কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৪ টাকা ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করে। ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর সময়ে এ ঘটনা ঘটে। পণ্য চালান খালাসের জন্য সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট লাবনী এন্টারপ্রাইজের তিন অংশীদার রাশেদ খান, মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও আরিফুর রহমান ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। কাস্টম হাউসের অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে পণ্য চালানটি ওই দিনই ‘ডু নট রিলিজ’ মর্মে লক করা হয়। কিন্তু ৮ ডিসেম্বর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হকের ইউজার আইডি ব্যবহার করে অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা হয়। এর সঙ্গে আব্দুল গোফরান ও জহুরুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হকের ইউজার আইডি অপব্যবহারের সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হকের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। এছাড়া লক করা পণ্য চালানটি খালাসের আগে কায়িক পরীক্ষা না করে অবৈধভাবে খালাসে সহযোগিতা করেছেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হক। এছাড়া এআইআর শাখার কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, এআইআর শাখার উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামও এর সঙ্গে জড়িত। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের পিয়ার সন্স টাওয়ারের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসএএম (স্যাম) ইন্টারন্যাশনাল। এটির মালিক সেফায়েত উল্লাহ। প্রতিষ্ঠানটি সিনথেটিক ফাইবার আমদানির মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কহারযুক্ত পণ্য সিগারেট আমদানি ও খালাস করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মোট আট কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৪ টাকা ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছে।
২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর উত্তরা ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় একটি হিসাব খোলেন। চীন থেকে সিনথেটিক ফাইবার আমদানির জন্য ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর এলসি খোলেন। পণ্য চালান খালাসের জন্য সি এন্ড এফ এজেন্ট লাবনী এন্টারপ্রাইজের তিন অংশীদার রাশেদ খান, মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও আরিফুর রহমান ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শুল্ক ফাঁকির তথ্য পেয়ে কাস্টম হাউসের অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে পণ্য চালানটি ওই দিনই ‘ডু নট রিলিজ’ মর্মে লক করা হয়। কিন্তু ৮ ডিসেম্বর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হকের ইউজার আইডি ব্যবহার করে অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করা হয়। এর সঙ্গে আব্দুল গোফরান ও জহুরুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ২৬ ডিসেম্বর লক অবমুক্ত করে পণ্য খালাস করা হয়। রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হকের ইউজার আইডি অপব্যবহারের সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হকের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। এছাড়া লক করা পণ্য চালানটি খালাসের আগে কায়িক পরীক্ষা না করে অবৈধভাবে খালাসে সহযোগিতা করেছেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হক।
এছাড়া এআইআর শাখার কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, এআইআর শাখার উচ্চমান সহকারী আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক সিরাজুল ইসলামও এর সঙ্গে জড়িত। ২০১৮ সালের ১৭ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।