Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:34 am

তিন বছরেও দ্বিতীয় বর্ষ শেষ হয়নি রাবি ৫৬ বিভাগের শিক্ষার্থীদের

প্রতিনিধি, রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ১২টি অনুষদের অধীনে মোট বিভাগ রয়েছে ৬১টি। এর মধ্যে মোটামুটি সেশনজটমুক্ত মাত্র পাঁচটি বিভাগ। বাকি ৫৬ টি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় তিন বছর শেষে এখনো তৃতীয় বর্ষেই উঠতে পারেননি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেশনজট তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, কভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায়, এই সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেশনজটের বিষয়টি স্বীকার করছেন। বিভাগ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার ঘাটতির পাশাপাশি নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সৃষ্টি হওয়া শিক্ষক সংকটকেও দায়ী করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে আগস্ট মাস থেকে। গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে ৩০ অক্টোবর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৩ নভেম্বর, ফলিত গণিত বিভাগের ১০ নভেম্বর এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৮ ডিসেম্বর থেকে।

অন্যদিকে, বাকি ৫৬টি বিভাগের অধিকাংশ বিভাগের ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এখনো দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলছে। কয়েকটি বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে এবং কয়েকটিতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শীঘ্রই শুরু হবে। এছাড়াও এমনও বিভাগ রয়েছে যেখানে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস এখনও শুরু হয়নি। এমন অবস্থায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন সেশনজটে ভোগা শিক্ষার্থীরা।

সেশনজটমুক্ত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহান ইসলাম নাহিদ বলেন, আমাদের বিভাগে সেশনজট না থাকার কারণ হচ্ছে বিভাগের সভাপতিসহ শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং সময়মতো ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া। এছাড়া করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বিভাগকে গতিশীল রাখতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতা বিভাগে সেশনজট না থাকার বড় একটা কারণ।

অন্যদিকে সেশনজটে আটকে থাকা লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, কভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘ দেড় বছরের যে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে, তা কমিয়ে আনার বিষয়ে প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। এখনও প্রতিটা সেমিস্টার শেষ করতে ৬ মাস বা তারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসে তৃতীয় সেমিস্টার এক্সাম দিচ্ছি। অর্থাৎ ৩ বছরে শেষ হচ্ছে মাত্র তিন সেমিস্টার। যা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য একটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেশনজটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু বিভাগে সেশনজট আছে, এটা সত্য। একটা সময় ছিল যখন চার বছরের প্রোগ্রাম শেষ হতে সাত-আট বছর লেগে যেত। সে তুলনায় এখন সেশনজট অনেক কমে গেছে। বর্তমানে পাঁচ বছরের প্রোগ্রাম শেষ হতে আনুমানিক ছয়-সাড়ে ছয় বছর লেগে যায়।

তিনি বলেন, সেশনজট সৃষ্টির অনেকগুলো কারণ আছে। কভিড-১৯ এর কারণে আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। আবার নিয়োগ কার্যক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে কিছুটা শিক্ষক সংকটও রয়েছে। আমরা প্রশাসনিকভাবে সেশনজট কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে রাতারাতি এটাকে জিরো লেভেলে আনা সম্ভব না।

পাঁচটি বিভাগ অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সেশনজটমুক্ত কিভাবে? জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায়, সেটার প্রভাবও কিছুটা রয়েছে এখানে। যে বিভাগগুলো এগিয়ে গেছে তাদের হয়তো চেষ্টা ও আন্তরিকতা ছিল বা তাদের অন্যান্য জটিলতা নেই। আর অন্যান্য বিভাগগুলো পিছিয়ে পড়ার পিছনে শিক্ষক স্বল্পতাও একটা কারণ হতে পারে।