Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 1:17 am

তিন বছরেও ফিডার সার্ভিস চালু করতে পারেনি বিএসসি

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক শিপিং সংস্থা। গত কয়েক বছর নিট মুনাফা বাড়লেও অর্থ সংকট, বিনিয়োগের অভাব ও ‘বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ আইন, ২০১৯’ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সম্ভাবনা অবিকশিত থাকছে। এ নিয়ে শেয়ার বিজের ধারাবাহিক আয়োজনের আজ দ্বিতীয় পর্ব

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের নিকটতম বন্দরগুলোর একটি কলম্বো বন্দর। এ রুট দিয়ে বছরে প্রায় সাত লাখ টিইউএসের বেশি কনটেইনার পরিবহন করা হয়। পাশাপাশি সাত কোটি ৪০ লাখ টন কার্গো পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ আমদানি ও রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ও কার্গোর ২৫ শতাংশ কলম্বো হয়ে আসে। আর একটি জাহাজের একবার যাতায়াত করতে সময় লাগে চার দিন, যা ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক লাভজনক একটি রুট। কিন্তু দ্রæত সময় ও লাভজনক হওয়ার পরও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি) গত তিন বছরেও চালু করতে পারেনি চট্টগ্রাম-কলম্বো-চট্টগ্রাম নৌরুট ফিডার সার্ভিস। অথচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ রুটে বিনিয়োগ বাড়াতে তৎপর।

বিএসসি সূত্রে জানা যায়, কনটেইনার পরিবহন বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় বিএসসি লাভজনক ও সফল অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য চারটি সেলুলার কনটেইনার জাহাজ কেনার প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রতিটি এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টিইউইএস কনটেইনার ধারণক্ষমতার জাহাজ। এছাড়া বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই চট্টগ্রাম-কলম্বো নৌরুটে যৌথ উদ্যোগে ফিডার সার্ভিস চালু করার জন্য একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ রুটে নতুন জাহাজ পরিচালনায় অনুমতি দিচ্ছে না। এক্ষেত্রে লাভজনক হওয়ার পরও ফিডার সার্ভিস চালুর অনুমতি মিলছে না বলে অভিযোগ বেসরকারি শিপিং লাইন মালিকদের।

বেসরকারি শিপিং লাইন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের গভীরতা কম থাকায় বাংলাদেশে সরাসরি মেইন লাইন অপারেটরের মাদার ভেসেল আসে না। এতে কলম্বো, সিঙ্গাপুর, তানজুং পেলিপাস এবং পোর্ট কেলাং হয়ে মাদার ভেসেল আসে। আর এসব পোর্ট থেকে ফিডার জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ও কনটেইনার আনা হয়।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখানো হয়, সিঙ্গাপুর হয়ে আমদানি পণ্য আসে ৪৪ শতাংশ, ৩৭ শতাংশ আসে কলম্বো হয়ে, ১২ শতাংশ আসে তানজুং পেলিপাস এবং সাত শতাংশ আসে পোর্ট কেলাং হয়ে। অপরদিকে বড় একটি বহুজাতিক শিপিং করপোরেশনের রুট হিসাবচিত্র থেকে দেখা যায়, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম-কলম্বো নৌরুটে মোট (পণ্যভর্তি ও খালি কনটেইনার) ছয় লাখ চার হাজার কনটেইনার পরিবাহিত হয়। একইভাবে ২০১৮ সালে ছয় লাখ পাঁচ হাজার, ২০১৯ সালে ছয় লাখ ৭২ হাজার এবং চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৮৭ হাজার কনটেইনার পরিবাহিত হয়। এছাড়া ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কার্গো প্রায় সাত কোটি ৪০ লাখ টন পরিবাহিত হয়।

অপরদিকে বিএসসির কর্মকর্তারা বলেন, বিএসসির পশ্চিম এশিয়ার উপসাগরীয় সার্ভিস রুটে চার্টারিং/ লাইটারেজ/ কনটেইনার ও ফিডার সার্ভিস থেকে সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুই কোটি ৯১ লাখ টাকা আয় হয়েছিল। এর পর থেকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আর আয় হয়নি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একটি শিপিং লাইনের শীর্ষ কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ রুট সবচেয়ে লাভজনক। কারণ এটি একটি ট্রানজিট পোর্ট। আমাদের প্রতি মাসে ২৫-২৬ হাজার কনটেইনার পরিবাহিত হয়। আমাদের মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ৭০ শতাংশ এ রুটে হয়। মাত্র চার দিনে মেইন লাইনে কনটেইনার বুঝিয়ে দেয়া যায়। আমাদের এ মুহূর্তে সাতটি জাহাজ চলাচল করছে। আমরা আরও কয়েকটি জাহাজ নামাতে আগ্রহী। কিন্তু অনুমতি পাচ্ছি না। নানা অজুহাতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর সুমন মাহমুদ সাব্বির বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম-শ্রীলঙ্কা রুটে ফিডার জাহাজ চালু করার জন্য কাজ করছি। এটি নিয়ে আমাদের একটি প্রকল্প আছে। বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী ভালো বিনিয়োগ প্রস্তাব আছে। সব দিক থেকে যাচাই-বাছাই করার জন্য সময় লাগছে, যদিও বিনিয়োগ ও অর্থ সংকট থাকার কারণে নতুন নতুন জাহাজ সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের মাত্র দুটি লাইটারেজ জাহাজ ছিল। এখন নতুন ছয়টি জাহাজ যুক্ত হয়েছে। আস্তে আস্তে বিএসসি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।’