নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। টানা দরপতনে কমছে সব মূল্যসূচক। সর্বশেষ পাঁচ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা দরপতন হয়েছে, এতে সূচক কমেছে ২৬৫ পয়েন্ট। আর গত প্রায় তিন মাসের ব্যবধানে সূচক কমেছে এক হাজার ১৬ পয়েন্ট। ১১ ফেব্রুয়ারি সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট, যা প্রায় তিন মাসের ব্যবধানে ৫ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এতে সূচক কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। সূচকের এমন পতনে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে সূচক। এর আগে ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল সূচক ছিল ৫ হাজার ৪২২ পয়েন্ট।
বাজারে চলমান সংকট মোকাবিলা এবং পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গেল সপ্তাহে ডিএসই অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকে বসে। এতে পুঁজিবাজারের নীতিগত বিষয়গুলোর সংস্কারসহ নানা বিষয় ওঠে আসে। যদিও বৈঠকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান ডিএসই চেয়ারম্যান হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু। এদিকে, বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থার সংকটকে পুঁজিবাজারের এমন পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক কার্যদিবসের মতো রোববারও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বনিম্ন দামে অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। এতে ক্রেতা সংকটে পড়ে প্রায় দুইশ প্রতিষ্ঠান। ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। প্রধান পুঁজিবাজারে সবকটি খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দামে ঢালাও পতন হয়েছে। বাজারটিতে ৮৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক দেড় শতাংশের ওপরে কমে গেছে। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ৫০০ কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ২২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৪৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ১৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৮৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৯১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪০৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২৬৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল এর চেয়েও কম ৩৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
গতকাল টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিচ হ্যাচারির শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ই-জেনারেশনের ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৪ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে—ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, লাভেলো আইসক্রিম, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং রিলায়েন্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া ২২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৬টির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।