রহমত রহমান: পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান রায়হান অ্যাপারেলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তিন বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানি করেছে, কিন্তু কী পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করেছে, কী পরিমাণ রপ্তানি করেছে, তার কোনো হিসাব দেয়নি। বন্ড কমিশনারেটে কোনো ইউডি জমা দেয়নি। এমনকি তিন বছরে আমদানি করা কাঁচামালের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর পরিশোধ করেনি। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া নিরীক্ষা কাজে কোনো সহযোগিতা করেনি, সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির বন্ড লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত ও বিআইএন লক করা হয়েছে। প্রযোজ্য শুল্ককর পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটিকে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এ নোটিস জারি করেছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রায়হান অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ওসমানের মোবাইলে ফোন করলে সংযোগ ব্যস্ত পাওয়া যায়। তার বক্তব্য জানতে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বক্তব্য জানতে খুদেবার্তা দেয়া হলে তিনি সেটি রিসিভ করেন। তবে ফোন রিসিভ বা খুদেবার্তার বিষয়ে কোনো জবাব দেননি।
সূত্রমতে, রায়হান অ্যাপারেলস লিমিটেড ২০১২ সালে উৎপাদন শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি ডেনিম প্যান্ট, প্যাডিং জ্যাকেট, পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের প্যান্ট, শার্ট, ট্রাউজার এবং জাঙ্গিয়া পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে। রাজধানীর অদূরে তুরাগের কামারপাড়ায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১২ সালে শর্তসাপেক্ষে বন্ড লাইসেন্স দেয়া হয়। লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অভিযোগ ওঠে। বন্ড লাইসেন্স বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটির অডিট (নিরীক্ষা) সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত দলিলাদি দিয়ে সহযোগিতা করা হয় না। ফলে প্রতিবছর নিরীক্ষা সম্পন্ন হয় না।
সূত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর কী পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করে, কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে, তার কোনো তথ্য বন্ড কমিশনারেটে জমা দেয়নি। এছাড়া কাঁচামাল আমদানিতে কোনো ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) বন্ড কমিশনারেটে জমা দেয়নি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানি করছে, কিন্তু বন্ড কমিশনারেটে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র জমা দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটি আইন ও বিধিসম্মতভাবে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে না বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। বিশেষ করে ২০১৭ সালের ২৮ জুন থেকে ২০২০ সালের ২৭ জুন পর্যন্ত নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কাছে আমদানি-রপ্তানি ও অন্যান্য দলিলাদি চাইলেও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেয়া হয়নি। নিরীক্ষা কাজে সহযোগিতা না করায় এনবিআরের কম্পিউটার ডেটা বেইজ (সিআইএস) সেল থেকে আমদানি তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু কোনো ইউডির তথ্য না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি আমদানিকৃত ও স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত কী পরিমাণ কাঁচামাল ব্যবহার করে কী পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করেছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি বন্ড কমিশনারেট।
প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ জুন থেকে ২০২০ সালের ২৭ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির আমদানি করা কাঁচামালের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ২২৩ টাকা। এটির ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর ১০ কোটি ৫৭ লাখ ৯৩ হাজার ৫৭০ টাকা, যা প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেনি। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমস আইন ও বন্ড লাইসেন্সের শর্ত, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে।
প্রযোজ্য শুল্ককর বিষয়ে ব্যাখ্যা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনার মো. শওকাত হোসেনের সই করা এ নোটিস জারি করা হয়। নোটিসে প্রতিষ্ঠানকে ১৫ দিনের সময় দেয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুল্ককর পরিশোধ না করলে, জবাব না দিলে এবং রপ্তানি-সংক্রান্ত দলিলাদি না পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা করে মামলাটি চূড়ান্ত করা হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিআইএন লক ও লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।