Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:24 pm

তিন মাসে অডিট আপত্তি ৪৪০% ও ফাঁকি উদ্ঘাটন ৫০৫% বেড়েছে

রহমত রহমান: কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটে অডিট আপত্তি যাচাইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটনও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে এক হাজার ৪১০টি। এর মধ্যে ৪৭০টি অডিট আপত্তিতে রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে।

এদিকে অডিট আপত্তির সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৪৪০ শতাংশ। আর তিন মাসে রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে ২৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০৫ শতাংশ। মনিটরিংয়ের ফলে এ কমিশনারেটের কাজের গতি ও রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন বেড়েছে। কমিশনারেটের তিন মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এনবিআর সূত্রে এ জানা গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, খালাস-উত্তর নিরীক্ষা (পিসিএ)-এ দপ্তরের অন্যতম কাজ। এ দপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচটি টিমের মাধ্যমে খালাস-উত্তর নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে নিরীক্ষা লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২৫টি পিসিএ। যাচাই করা হয়েছে এক হাজার ৪১০টি। যার মধ্যে ৪৭০টিতে অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। যাতে রাজস্ব জড়িত রয়েছে ২৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যদিও অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে নিরীক্ষা লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৬টি। মূল্য, শ্রেণিবিন্যাস ও প্রযোজ্য রেয়াতি সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো এ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে নিরীক্ষা লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫টি। কিন্তু যাচাই হয়েছে ৪৬৫টি, যাতে ১৫৫টিতে আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে। যাতে রাজস্ব জড়িত ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। গত বছরের একই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮টি, যাচাই হয়েছে ৮৯টি। যাতে ৪৪টিতে এক কোটি ৯৯ লাখ টাকা জড়িত রাজস্ব। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪টি। যাচাই হয়েছে ৮৩টি, যাতে ৩৭টিতে রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের তিন মাসে ৪৭০টি নিরীক্ষার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ১০৬টি নিরীক্ষায় জড়িত রাজস্ব ৮ কোটি টাকা। ঢাকা কাস্টম হাউসের ৫৫টি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব ৬৫ লাখ টাকা। আইসিডি কাস্টম হাউসের ৩৯টি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব ৫২ লাখ টাকা। মোংলা কাস্টম হাউসের তিনটি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব ৫ লাখ টাকা। বেনাপোল কাস্টম হাউসের ১৮টি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা। পানগাঁও কাস্টম হাউসের ২৬টি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব ৪৩ লাখ টাকা। সোনামসজিদ শুল্ক স্টেশনের সাতটি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব ৬৫ লাখ টাকা। হিলি শুল্ক স্টেশনের ৭৪টি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব ১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনের ১৪০টি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব ৫২ লাখ টাকা। টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের দুটি আপত্তিতে জড়িত রাজস্ব ৩৩ হাজার টাকা।

প্রতিবেদন আরও বলা হয়, এসব কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে অসত্য এইচএস কোড ও মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কালিজিরা আমদানি করা হয়েছে। বেশিরভাগ নিরীক্ষায় কালিজিরার আমদানি চালানে রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। এছাড়া বন্ড সুবিধার কাপড় খোলাবাজারে বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ফাইভ এফ অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯ কোটি ৬২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অডিট আপত্তির মধ্যে তিন মাসে টেক্সটাইল শিল্পের জন্য আমদানি করা যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, উপকরণ ইত্যাদির ওপর হতে আমদানি শুল্ক, মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি-সংক্রান্ত এসআরও যাচাই করে ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। এছাড়া চামড়া শিল্পে কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে শুল্ক সুবিধা-সংক্রান্ত এসআরও’র আওতায় উপকরণ, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের ব্যবহার বিষয়ক নিরীক্ষা করেও ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে অডিটের সংখ্যা ১৬৪। যার মধ্যে ১৪৫টি প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। যেখানে গত অর্থবছর একই সময় অডিটের সংখ্যা ছিল ১৬৯টি, যাতে প্রতিবেদন দেওয়া হয় ১৫২টি। 

এ বিষয়ে কাস্টমস মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেটের কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, সব পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও শুল্কায়ন নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে এ দপ্তর কাজ করে থাকে। পিসিএ করার উদ্দেশ্য শুধু ফাঁকিকৃত রাজস্ব বের করা নয়। কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কমপ্লায়েন্স সৃষ্টি করা, যাতে করে ভবিষ্যতে শুল্কায়ন কার্যক্রমে কর্মকর্তারা আরও অধিকতর স্বচ্ছ ও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। কর্মকর্তাদের পরিশ্রম, আন্তরিকতা আর এক নিষ্ঠার ফলে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এমন সাফল্য এসেছে বলে মনে করেন তিনি।