Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:14 pm

তিন মাসে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ আইসিবির

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারকে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে  চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮)  প্রথম তিন মাসে এক হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। গত সেপ্টেম্বর শেষে পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৮ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে আরও সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে বলে আইসিবি সূত্রে জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে আইসিবি মোট সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে বছরের শুরুতেই বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে চার হাজার ৮৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল। এদিকে গত তিন বছরে ডিএসইতে আইসিবি মোট লেনদেন করেছে ৩৬ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া গত তিন বছরে আইসিবি এবং এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিও এবং আইসিবি পরিচালিত মিউচুয়াল ফান্ড পোর্টফোলিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগ রয়েছে ১১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে আইসিবির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রতিবছরই পুঁজিবাজারে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে আইসিবি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করা হয়। মূলত বাজার সচল রাখার জন্যই এ বিনিয়োগ করা হয়। আইসিবির বিনিয়োগ বাড়লে বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ে।’

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাজারের স্বার্থে এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আরও বাড়ানো উচিত। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে এই বিনিয়োগ বাড়ছে না।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে আরও বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমনটি লক্ষ করা যায় না। এর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ বাজারে ভালো শেয়ারের অভাব থাকা। ভালো কোম্পানি না থাকলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেউ-ই বিনিয়োগে প্রশান্তি পাবে না।’

এদিকে আইসিবির এ বিনিয়োগ পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের উত্থান-পতনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এটা বিশ্বের সব দেশেই দেখা যায়।  সেসব দেশে বাজারে বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে শেয়ার কিনে নেন। আবার শেয়ার সংকট দেখা দিলে তাদের বিক্রেতার ভূমিকাও পালন করতে দেখা যায়।

তারা বলেন, বাজারে এখন স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এ সময় আইসিবির বিনিয়োগ বাজারের জন্য সুসংবাদই বয়ে আনবে। এতে বাজার আরও চাঙা হওয়ার সুযোগ থাকবে।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন,  ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ  বাড়লে তা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। কারণ বাজারে ধরে রাখার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। তবে বিনিয়োগকারীদের একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার, সেটা হচ্ছে বিনিয়োগ আসলেই কোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হবে না। তাদের বিনিয়োগ হওয়া উচিত কোম্পানির আর্থিক মৌলভিত্তির বিচারে।’

একই প্রসঙ্গে ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্যে করে এটা ঠিক। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখা দরকার, পুঁজিবাজারে সবাই আসে লাভ করার জন্য। তাই কে বা কারা বিনিয়োগ করছে, তা না ভেবে বিনিয়োগকারীদের উচিত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করা।’