নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনীতিতে ডলার, মূল্যস্ফীতিসহ নানা সংকট চলছে। এই সংকটের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতেও দেশে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি এসব হিসাবে টাকা রাখার পরিমাণও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজার ৩২২টি। এর বিপরীতে আমানত বেড়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে, এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। কোটি টাকার ওপরে এসব ব্যাংক হিসাবে মোট জমা আছে সাত লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।
গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে এক কোটি টাকার বেশি আমানতের ব্যাংক হিসাব ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি। ওই প্রান্তিকে এসব ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল সাত লাখ ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে তিন হাজার ৩২২টি। একই সময়ে এসব হিসাবের বিপরীতে জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৫ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪৮ দশমিক ২৮ শতাংশই জমা করেছেন কোটি টাকার হিসাবধারীরা। অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ছয় হাজার ৯৬২টি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর হিসাব ছিল ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৬০৯টি। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানত জমা হয়েছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাত লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকাই কোটি টাকার হিসাবধারীদের।
তবে কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি নাগরিকদের হিসাব নয়। কেননা অনেক ব্যক্তিই যেমন ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখেন, তেমনি অনেক প্রতিষ্ঠানও তা করে। অর্থাৎ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বলতে যুগপৎ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের কথাই বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তারও কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৫১৬টিতে, যেখানে জমা ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি এক টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৬৫২টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।
এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৮২টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে দুই হাজার দুইটি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ৩৪৫টি এবং ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯১২টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৪৮০টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাবসংখ্যা ৭৩৮টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮১২টি।
দেশে প্রকৃত কোটিপতির সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। ফলে কত মানুষের কোটি টাকা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাবসংখ্যা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা কভিড-১৯ মহামারির পর থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল মাত্র ৪৭টি, যা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৫১৬টিতে। করোনা মহামারির শুরুতে ২০২০ সালের মার্চে এই সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫, যা বর্তমানে প্রায় এক লাখ ১৭ হাজারে উন্নীত হয়েছে।