Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:54 pm

তিন মাসে তদন্ত শেষ না করলে ‘ব্যবস্থা নেবেন’ হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে দায়ের হওয়া ৫৬ দুর্নীতি মামলার তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে না পারলে দুদকের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ আইনি পদক্ষেপ’ নেয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ গতকাল এক রায়ের পর্যবেক্ষণে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

বেসিক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার ব্যবস্থাপক আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন আবেদন খারিজ করে এই রায় দেন আদালত।

রায়ে আদালত বলেছেন, ‘কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়া’ তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। তদন্ত শেষ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে প্রতিবেদন দিতে হবে হাইকোর্টে। তদন্ত শেষ করতে না পারলে দুর্নীতি দমনের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ আইনি পদক্ষেপ’ নেয়া হবে।

আদালতে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম আবুল হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জোবায়দুর রহমান। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, তদন্ত শেষ করে তিন মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত।

কমিশনের বিরুদ্ধে এভাবে ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি এর আগে কোনো আদালত থেকে এসেছে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘কমিশনের ওপর ছিল না। তদন্তকারী কর্মকর্তার ওপরে অনেক মামলায় ছিল।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫৬ মামলার বিষয়টি কোর্ট স্পেসিফাই করেননি। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি, ৫৬ মামলার বিষয়েই আদেশটি দেয়া হয়েছে।

নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করতে রায়ে তাগাদা দিয়ে আদালত বলেছেন, সময়মতো তদন্ত শেষ করতে না পারলে মামলার অনেক প্রমাণ ধ্বংস হয়ে যায়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এই টাকা হচ্ছে জনগণের টাকা, জনগণের কষ্টের টাকা। এই টাকা দেশ ও জনগণের কল্যাণ ছাড়া অন্য জায়গায় যেতে পারে না। এটা রক্ষা করা ব্যাংকের দায়িত্ব। সেখানে ব্যাংক ব্যবস্থাপকের ব্যর্থতাকে আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। ১২০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন এই সময়ে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিদেশে ঋণখেলাপিরা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হতে পারে না। সাধারণ নাগরিকরা যেসব সুবিধা পায়, সেগুলোও তারা পায় না।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, রায়ে আদালত বলেছেন, বিদেশে ঋণখেলাপিদের ক্রেডিট কার্ড, স্মার্ট কার্ড ও বিমানের টিকিট দেয়া হয় না। কিন্তু আমাদের এখানে এটা উল্টো। এক প্রশ্নের জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, বেসিক ব্যাংকের মামলাগুলো হয়েছিল ২০১৫ সালে। দীর্ঘ সময় ধরে এ তদন্ত ঝুলে আছে। আদালত বলেছেন, নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত শেষ করতে না পারলে নিজেরাই যেন দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। তারা ছেড়ে দেবে যে, আমরা এটা পারছি না। তখন অন্য কেউ তদন্ত করবে।

রাষ্ট্রের এ আইন কর্মকর্তা বলেন, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে প্রায় দুই হাজার ৭৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। এর মধ্যে কেবল ১১৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। মোহাম্মদ আলীর জামিন আবেদন খারিজ করা হয়েছে তিন মামলায়। তার বিরুদ্ধে ৪২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে ১২টা মামলা রয়েছে।

তার আইনজীবী আবুল হোসেন বলেন, আদালত বলেছে তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট দিতে হবে। যদি তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট না দেয়, তাহলে কোর্ট দুদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। চার্জশিট দেয়ার পর সেটা জানিয়ে একটা অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে। আসামির জামিনের বিষয়টি কখন ফের আসবেÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামিনের রুল খারিজ হয়ে গেছে। এখন এটি আবার আসবে চার্জশিটের পর।