নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ফোন কোম্পানির নেটওয়ার্কের জন্য স্থাপিত টাওয়ার থেকে বিচ্ছুরিত বিকিরণের (রেডিয়েশন) মাত্রা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না সে বিষয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়ন প্রতিবেদন জানতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংস্থা তিনটি হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ও ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন প্রটেকশন (আইসিএনআইআরপি)। একই সঙ্গে এ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন সংগ্রহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়গুলো হলফনামা আকারে আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে জমা দিতে বলেছেন আদালত।
এক রিট আবেদননের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আদালত। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, বিটিআরসির পক্ষে খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। রাষ্ট্রপক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী জিনাত হক।
এর আগে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশে থাকা ‘বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত্র নীতিমালা’ বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- তাও ওই দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে। মোবাইল ফোনের টাওয়ারের বিকিরণ নিঃসরণ নিয়ে পাঁচ বছর আগে করা এক রিট আবেদনের শুনানির সময় সম্পূরক আরেকটি আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। চার বছর আগের এ প্রতিবেদন এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বিটিআরসি এ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চান আদালত।
জবাবে রেজা-ই-রাকিব বলেন, একটি গাইডলাইন (নীতিমালা) করছে। খসড়া হয়েছে। আজকেই কমিশনের মিটিংয়ে বিষয়টি উঠবে বলে জানি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাবে আশা করি।
মোবাইল ফোনের টাওয়ারের বিকিরণ নিঃসরণ নিয়ে ২০১২ সালে জনস্বার্থে এ রিট আবেদন করে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
তখন আদালত আণবিক শক্তি কমিশনকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার কয়েকটি মোবাইল টাওয়ার পরীক্ষা করে বিকিরণের মাত্রা জানাতে বলেন। সে সঙ্গে বিকিরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
২০১৩ সালে আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে আণবিক শক্তি কমিশন বলেছিল, উপযুক্ত যন্ত্রপাতি না থাকার কারণে তারা সঠিকভাবে বিকিরণ নিরূপণ করতে পারেনি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন তখন জমা দেয়নি, সেটা চার বছর পর মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হয় বলে জানান রেজা-ই-রাকিব।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় গত সপ্তাহে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়েছিল। আদালত শুনানি নিয়ে সে আবেদন গ্রহণ করেছে।
এর আগে গত ২২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে মৌখিকভাবে জানায়, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশনের (বিকিরণ) মাত্রা উচ্চ পর্যায়ের, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
সারা দেশে ৬টি টাওয়ার পরীক্ষা করে একটিতে উচ্চমাত্রার বিকিরণ পাওয়া যায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে নিয়মিতভাবে বিকিরণ পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বিটিআরসিকে সুপারিশ করে বিশেষজ্ঞ কমিটি।
সেদিন আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে হলফনামা আকারে জমা দিতে নির্দেশ দেয় রাষ্ট্রপক্ষকে।
এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বিটিআরসি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটিও এর মধ্যে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়। সে অনুযায়ী আদালত মঙ্গলবার আদেশ দেয়।