তিন সপ্তাহ লেনদেনে শীর্ষে থাকলেও শেয়ারের দাম বৃদ্ধির হার কম

আতাউর রহমান: চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহের লেনদেন শেষ করেছে দেশের পুঁজিবাজার। এই তিন সপ্তাহে পুঁজিবাজারে প্রথম ও তৃতীয় সপ্তাহে উত্থান হয়েছে। আর দ্বিতীয় সপ্তাহে পতন হয়েছে। আলোচিত সপ্তাহগুলোতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল বস্ত্র, বিবিধ, ওষুধ এবং প্রকৌশল খাত। টানা তিন সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করলেও এই চারটি খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো রিটার্ন পায়নি বলে জানান বাজার-সংশ্লিষ্টরা।

তারা মনে করছেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থানের বিষয়ে দ্বিধায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা দেশের অর্থনীতির ভবিষৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন। যে কারণে অনেকে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং যারা সব সময় কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগে থাকেন তারা কিনে নিচ্ছেন। এতে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপের থেকে কেনার চাপ বেশি হচ্ছে এবং সে কারণে সূচকের উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে ও লেনদেন বাড়ছে। কিন্তু এই ধরনের সূচকের উত্থান ও লেনদেন বাড়লেও শেয়ার কম দামে বিক্রি করায় এ থেকে তেমন ভালো রিটার্ন পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।

গত তিন সপ্তাহের বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রথম সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩১২ পয়েন্টে। তবে তার পরের সপ্তাহেই মানে দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিএসইএক্স ২ দশমিক ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ১৪৯ পয়েন্ট। এর পরের সপ্তাহে বা গত সপ্তাহে ডিএসইএক্স ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৪১ পয়েন্ট। আলোচিত সপ্তাহগুলোর মধ্যে প্রথম সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১ কোটি টাকা, দ্বিতীয় সপ্তাহে সূচকের পতনের সঙ্গে লেনদেন কমে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৯৬ কোটি টাকা এবং গত সপ্তাহে সূচকের সঙ্গে লেনদেন কিছুটা বেড়ে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ৯৪৬ কোটি টাকা।

এই তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রথম সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে থাকা আলোচিত চার খাতে মোট লেনদেনের ৫২ দশমকি ৭০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মোট ৫ হাজার ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়। এর মধ্যে সবার শীর্ষে থাকা বস্ত্র খাতে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ বা ১ হাজার ২৩৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু খাতটিতে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন শেষে রিটার্ন এসেছে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। লেনদেনে শীর্ষে থেকেও রিটার্নে বস্ত্র খাত তৃতীয় স্থানে ছিল। এরপরের বিবিধ খাতে মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ বা ৫৭৬ কোটি ৬৮ লাখ লেনদেন হয়। আলোচিত সপ্তাহে ৯ শতাশ রিটার্ন এসে খাতটি প্রথম স্থানে রয়েছে। মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ১০ শতাংশ বা ৫১০ কোটি টাকা লেনদেন হয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফার্মা খাত। খাতটিতে আলোচিত সপ্তাহে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ রিটার্ন এসেছে এবং খাতটি ১৩তম স্থানে রয়েছে। ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ রিটার্ন এসেছে প্রথম সপ্তাহে ১২তম স্থানে ছিল প্রকৌশলী খাত। খাতটিতে এ সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ বা ৩৩৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।

এরপরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারে সূচক ও লেনদেনের পতন হলেও খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে অবস্থানে রয়েছে বস্ত্র খাত। খাতটিতে মোট লেনদেনের ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ৮৯২ কোটি ৪২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। বাজারের পতনের কারণে খাতটিতে এ সপ্তাহে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ লোকসানে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। খাতটি লোকসানের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। মোট লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিবিধ খাতে ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ৪৬২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। খাতটি আলোচিত সপ্তাহে লোকসানের দিক থেকে সবার শীর্ষে রয়েছে। খাতটিতে দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ লোকসান হয়েছে। এরপর যথাক্রমে ওষুধ খাতে ১২ শতাংশ লেনদেন হয়ে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ লোকসান হয়েছে এবং প্রকৌশলী খাতে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ লেনদেন হয়ে ২ দশমিক ৬০ শতাংশ লোকসান হয়েছে।

এদিকে তৃতীয় বা গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের শীর্ষে থাকা বস্ত্র খাতে ২০ শতাংশ বা ৫৬৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু খাতটিতে শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। খাতটি রিটার্নের দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। গত সপ্তাহে বিবিধ খাতে মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ বা ৪০৩ কোটি ৯ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে খাতটি ২ শতাংশ রিটার্ন নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে। এরপর যথাক্রমে ওষুধ খাতে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ ও প্রকৌশল খাতে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। খাত দুটিতে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ ও দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে। সে হিসাবে খাত দুটি যথাক্রমে রিটার্নের দিক থেকে ১৩তম এবং ১৫তম অবস্থানে রয়েছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজার ভালো অবস্থানে ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মাঝে জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া এবং দেশের অর্থনীতির ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। যে কারণে দ্বিতীয় সপ্তাহে সূচক ও লেনদেনের পতন ঘটে। তবে গত সপ্তাহে ডলারের ক্রয়-বিক্রয়ের হারের মধ্যে স্প্রেড নির্ধারণ ও বিপিসির কাছে ফানের্সড অয়েল তেল বিক্রির জন্য রাশিয়ার প্রস্তাব বিনিয়োগকারীদের হতাশা কিছুটা কাটিয়ে দিয়েছে। যে কারণে এটাকে কিছু বিনিয়োগকারী সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ কম মুনাফায় বা কম দামেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। অপরদিকে যারা সব সময় কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগে থাকেন তারা এই সুযোগ শেয়ার কিনে নিচ্ছেন। এতে বাজারে শেয়ার কেনার চাপ বেড়ে সূচক যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি লেনদেনেও বাড়ছে। তবে সব শেয়ারের দাম বাড়ার ওপর তেমন প্রভাব পড়ছে না। তাই কিছু খাতে লেনদেন অনেক হলেও সেই খাতের সব বা অধিকাংশ শেয়ার দর বাড়ছে না এবং বিনিয়োগকারীদের মুনাফা কম হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, লেনদেনের চিত্র দেখে বাজার ভালো অবস্থানে আছে বলা যায়। এতে মনে হচ্ছে বাজারে কিছু বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করছে। তবে বাজারে কেউ দীর্ঘ সময়ের জন্য বা বিনিয়োগের উদ্দেশ্য বিনিয়োগ করে না। সবাই স্বল্প সময়ে মুনাফা ও কম সময় শেয়ার ধরে রাখার উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করে। যার ফলে কোনো খাতেই বেশিরভাগ শেয়ার দর বাড়ে না, খাতভিত্তিক কিছু শেয়ারের দর বাড়ে। যে কারণে লেনদেনে বেশি হলেও শেয়ার দর সেভাবে বাড়তে দেখা যায় না। তবে খাতভিত্তিক কিছু শেয়ারের দর যে বাড়ছে সেটা বাজারের জন্য ভালো বলে জানান তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০