ফারুক আলম, লালমনিরহাট : বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত, কাজ করছেন সব বয়সি নারী-পুরুষ। কেউ কুমড়া, কেউ পেঁয়াজ, রসুন, গম, লাউ, আলু, ভুট্টা আর করলা চাষ করছেন। আছে ধানও। আকাশ মিতালি করেছে চরের সবুজের সঙ্গে। চরভর্তি ফসলই যেখানকার প্রধান পরিচয়। তিস্তা যেখানে নিজেকে মেলে রেখেছে কৃষকের জন্য।
গল্পটা লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শৌলমারির চরের। জেলার পাঁচ উপজেলায় চরইচলি, চর গোকুণ্ডাসহ আছে আরও ছোট-বড় চর। শুষ্ক মৌসুমের মরা নদী তিস্তার চরে ফসলের হাসি দেখা যায় যেখানকার কৃষকের মুখে। চরের জীবন, নদীর সঙ্গে যুদ্ধ। কিন্তু সে যুদ্ধে বিজয়ের হাসিটা চরবাসী-ই হাসতে চায়।
চরের হাসির মধ্যে আছে কৃষকের বেদনা। ভারতীয় ভেজাল বীজে ক্ষেত নষ্টের অভিযোগ। গড়ে উঠছে দালান-কোঠা, আছে কোম্পানির আগ্রাসন। জমি চলে যাচ্ছে করপোরেটদের হাতে। তৈরি হচ্ছে সড়ক, বসছে বাজার; দূষণ হচ্ছে নদীর পরিবেশ।
এ চরে ছাগল চরান লাইলি বেগম। ছাগলগুলো বেশ বড়, চরের ঘাস খেয়েই চলছে লাইলি বেগমের খামার। প্রতিটি ছাগল থেকে ১ লিটার পর্যন্ত দুধ পান তিনি। সম্প্রতি একসঙ্গে ২০টি ছাগল বিক্রি করেছেন লাইলি। বলছিলেন, বর্ষাকালেও তার সমস্যা হয় না। নদীতে পানি এলে নৌকা করে ছাগলগুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যান। বড় কোনো সমস্যা হওয়ার আগেই নিয়ে রাখেন আগাম ব্যবস্থা।
চোখ আটকে যায় চরের বিস্তর মিষ্টি কুমড়া আর ভুট্টা ক্ষেতে। ইতোমধ্যে ভুট্টার ব্র্যান্ডিং জেলা লালমনিরহাটে ভুট্টার ক্রয়কেন্দ্র হয়েছে। দুই-তিন বছর আগে এটি ছিল না। ২৮ টাকা কেজি দরে মিষ্টিকুমড়া কিনতে জেলায় ভিড়েছে কয়েকটি কোম্পানি। মিষ্টিকুমড়া চাষে ফেরোমন ফাঁদসহ খরচবিহীন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন কৃষকরা। এতে পোকা-মাকড়ের উৎপাত কমেছে।
এদিকে, সেকেন্দার আলী নামের এক কৃষক এখন যে কাউকে বিশ্বাস করতে নারাজ। তার ভাষ্য, বিশ্বাস এখন উঠে গেছে। দুটি প্লটে তিনি বীজ উৎপাদনে পেঁয়াজ বুনেছিলেন। সেই পেঁয়াজের এখন শুধু ডাটা হয়েছে, পেঁয়াজ হয়নি। তবে, সঠিক বীজ পেলে ভাগ্য বদলে যায় কৃষকের। তার মতে, কীভাবে শুষ্ক বালিতে ফসল ফলাতে হবে, তা চরের কৃষকরা জানেন। এক বিঘা জমিতে ধনে পাতার চাষ করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন তিনি।
বাইসাইকেলে বস্তাবন্দি মিষ্টিকুমড়া তুলছিলেন পরিমল চন্দ্র। পাঁচ বছর থেকে চরে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করছেন। আট টাকা ভার (দুই ডালি) শ্রমিক খরচ দিয়ে বালুর মধ্যে মাটি ফেলেছেন। সেই মাটিতে লাগিয়েছেন মিষ্টি কুমড়ো। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি কুমড়া ২০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বলেন, মিষ্টিকুমড়া চাষে পুরোটাই লাভ। প্রতি বিঘায় (২৭ শতাংশ) ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করা সম্ভব।
এলাকার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষকদের সার-বীজসহ সব রকম সহায়তা করা হয়। বিশেষ করে চরের কৃষকরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখছেন না।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার জগদীশ চন্দ্র রায় বলেন, বীজ আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের টেস্টিং উইং আছে। অবৈধভাবে বীজ আনার ফলে এসব বন্ধ করা যাচ্ছে না। চরের কৃষিতে আমাদের বাড়তি নজর আছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মতে আমরা চরে কাজ করছি।