Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 5:03 am

তিস্তার পানি নেমে গেছে রেখে গেছে ক্ষত

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: দিনমজুর আলম মিয়ার বসতভিটা ভেসে গেছে পানির তোড়ে। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ও চোখের পানিই শুধু ফেলেন। পাশে থাকা শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনটা ঘর ভেসে গেছে আলমের। চোখের সামনে সব শেষ। সবাই দেখে যাচ্ছে, জানি না কবে কি হবে।

মাত্র কয়েক ঘণ্টায় পানি বাড়ে তিস্তায়। এতে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত রয়ে গেছে তিস্তা অববাহিকায়। বাড়িঘর ও সড়ক ভেঙে গেছে। ব্যারাজের ৩০০ মিটার ফ্লোড বাঁধ ভেঙেছে। এক দিন এক রাতের দুর্বিষহ দিন কাটিয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষ। ৭০ কিলোমিটারের তিস্তা জনপদ ছিল আকস্মিকতায় অসহায়।

২০ অক্টোবর সকাল ৯টায় তিস্তার ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বাড়ে। দুপুর ৩টার দিকে বাড়ে ভাটির সব নি¤œাঞ্চলে। এদিন হঠাৎ ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। বেলা ৩টায় ৬০ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যায় ৬৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি উঠে, যা এ যাবৎকালের পানিপ্রবাহের সব রেকর্ড পার করেছে।

পরের দিন পানি হঠাৎ কমতে থাকে। কমতে কমতে ১১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু ব্যারাজের ভাটি অঞ্চলে তীব্র পানির চাপে রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর ভেঙে যায়। দিশেহারা হয় যেমন ভুক্তভোগীরা, আবার অনেকটাই কর্ম নিথর হয় সংশ্লিষ্টরা। যদিও তারা সরজমিন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। ঘটনার আকস্মিকতা ছিল চরম ভয়াবহ।

দু’দিনে তিস্তাপাড়ের মানুষরা দ্রুত তাদের বাড়িঘর ছাড়তে থাকেন। গবাদিপশুসহ হাতের কাছে যা ছিল তা নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। কেউ কেউ আত্মীয়দের বাড়ি, সড়কের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেন। উদ্ধার ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা ছিল না।

রেড এলার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ডিসি দপ্তর থেকে তাৎক্ষণিক জরুরি ত্রাণ ও নৌকা ব্যবস্থা করা হয়, যা ছিল অপ্রতুল ও অকার্যকর।

এদিন ডিসি আবু জাফর জানিয়েছেন, তার দপ্তর থেকে ১৭০ মেট্রিকটন জিআর চাল ও আট লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ বরাদ্দ প্রয়োজনে বাড়ানো হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।

পানি নামার পরে দেখা যায়, আগাম ভুট্টা, পাকা-আধপাকা ধান, চরের মসলা জাতীয় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিঃশেষ হয়ে গেছে সদ্য চাষের ফসল। নিচু সড়কগুলো ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে তীব্র স্রোত গেছে।

তিস্তাপাড়ের ফজলুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমরা একবেলা দুই বেলার রিলিফ চাই না। তিস্তার বাঁধ দিয়ে আমাদের স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করে দিন।

জহিরন নেছা বলেন, দিনে এক বেলা খেয়ে আছি। ঘরে কোনো খাবার নাই। রান্নার চাল নাই।

আকলিমা বলেন, আমার ঘরের দরজা, হাড়িপাতিল, খাবার সব ভেসে গেছে। এ অবস্থায় আমরা রান্না করে যে খাব সেই ব্যবস্থাও নাই। চুলাও নাই।

৭০ বছর বয়সী হায়দার আলী বলেন, জোহরের ওয়াক্তে পানি আসতে থাকে। রাত ১২টা থেকে গলাসমান পানি হয়। ঘর দিয়ে পানির তীব্র স্রোত যেতে থাকে। ঘরবাড়ি সব কিছু ভেঙে গেছে। ঘরবাড়ি ঠিক করার টাকা নেই।