নিজস্ব প্রতিবেদক: তিস্তা চুক্তি সই থেকে ভারত সরে আসবে না বলে আশা করছে বাংলাদেশ। আগামী এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে কথা হচ্ছে। তবে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না বাংলাদেশের তরফে। এদিকে তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের জন্যও ভারতের সমর্থন (কনসেন্ট)
চাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মন্ত্রী বলেন, আমরা দুটো বিষয়ই গুরুত্ব দিচ্ছি। দুটোই আমাদের প্রয়োজন এবং সেভাবেই চেষ্টা চলেছ। আগে আমরা যখন যেটা প্রয়োজন মনে হতো তখন তা নিয়ে কাজ করতাম। এখন আমরা সব বিষয়কে একসঙ্গে গুরুত্ব দিচ্ছি। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নদীর ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যমে ভূমিকা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ১৯৯০ সালে আমি যখন পানিসম্পদমন্ত্রী ছিলাম তখন জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে জনমত তৈরি করে অনেক সহায়তা করেছিল। এখন ওই সাংবাদিকদের অনেকে বেঁচে নেই। আর অনেকে আপনাদের সম্পাদক হয়েছেন। মোরসালীন নোমানীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা।
তিস্তার পানির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তিস্তায় যে পরিমাণ পানি পাই তাতে প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি চাষ করা যায়। অথচ আমাদের চাষ হয় মাত্র দেড় লাখ হেক্টর। অর্থাৎ, আরও তিন লাখ হেক্টর জমি চাষ করা যায়। জুলাই-ডিসেম্বর মৌসুমে আমাদের তিস্তার বাড়তি পানি প্রয়োজন নেই। তবে আমরা ভারতের কাছে পানি চাই বাকি শুষ্ক মৌসুমের জন্য।
গঙ্গা ব্যারাজ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, গঙ্গা নদীতে পানি ধরে রাখার জন্য আমরা ব্যারাজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে চাই। এক্ষেত্রে ভারতের সমর্থন আমাদের দরকার। কারণ, পাশ থেকে সীমান্ত এলাকায় গঙ্গার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে অর্ধেক এলাকায় নদীর উভয় পাশ বাংলাদেশের মধ্যে। সেখানে ব্যারাজ নির্মাণে ভারতের সমর্থন লাগবে না। কিন্তু বাকি ৮৪ কিলোমিটার নদীর এক পাশে বাংলাদেশ আর অন্য পাশে ভারতের সীমান্ত। ফলে সেখানে ব্যারাজ নির্মাণের জন্য তাদের সমর্থন দরকার। এ ছাড়া ব্যারাজ নির্মাণের পর নতুন কোনো ঝুঁকি তৈরি হয় কিনা, যেমনটা ফারাক্কার ক্ষেত্রে হয়েছে, তা নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে দেশের অভ্যন্তরীণ নদী শাসন সম্পর্কেও কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার নদী খননকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বালুর বিনিময়ে বড় নদীগুলো খননে সিঙ্গাপুরের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। টাকা ছাড়াই তারা নদী খনন করে দেবে। বিনিময়ে তারা বালু নিয়ে যাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে যমুনা নদীর ড্রেজিংয়ের কথা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় আলাদা আলাদা এলাকায় ড্রেজিং করে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীশ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জলপথে যোগাযোগের রুটগুলোতে ড্রেজিং করে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় শুধু সেতু এলাকায় ড্রেজিং করে। আর বাকি সব নদীর ড্রেজিংয়ের কাজ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় আছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। তবে, অধিকতর সমন্বয়ের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ করা হবে কিনা তা ভাবা হবে বলে তিনি জানান।
মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি-অনিয়ম প্রসঙ্গে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানান, পানির নিচের কাজে ৯৫ শতাংশ চুরি বন্ধ হয়েছে। (পানির) ওপরের কাজে এখনও কিছুটা অস্বচ্ছতা রয়েছে। এটা বন্ধেরও চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে অভিযোগ পাওয়া গেছে ধরেছি। ১২ জন লোককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:44 pm
তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ
পত্রিকা,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: