তিস্তা দেশের উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদী। খরস্রোত এ নদীতে ১৯৭৯ সালে নির্মাণ করা হয় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর ‘তিস্তা ব্যারাজ’ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। তিস্তায় যখন পূর্ণমাত্রায় পানি আসত, তখন শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ৬৫-৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করতে যে ব্যয় হয়, সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে চাষ করলে ব্যয় হয় তারা ২০ ভাগের এক ভাগ। ফলনও হয় আশাতীত। নীলফামারীর ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা, নীলফামারী সদর, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর; রংপুরের গঙ্গাচড়া; দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষক এ সেচ প্রকল্পের প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী।
ডিসেম্বরের পর থেকে তিস্তায় পানিপ্রবাহ অনেক কমে যায়। এলাকার হাজার হাজার হেক্টর বোরোর জমি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। অথচ প্রয়োজন মাত্র তিন হাজার কিউসেকের মতো পানি। নীলফামারীর ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজের উজানে ভারতের কুচবিহার জেলার মেকলিগঞ্জ থানার গজলডোবায় ব্যারাজ দিয়ে তিস্তার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে ভারত। ফলে প্রায়ই হুমকিতে পড়ে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প। আবার বর্ষাকালে দেশটি সব গেট খুলে দেয়ায় তিস্তা ব্যারাজের সব গেট ২৪ ঘণ্টা খুলে রেখেও অতিরিক্ত পানি সরানো সম্ভব হয় না। তখন ব্যারাজ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ফসল-বসতবাড়ি ঝুঁকিতে পড়ে। কিন্তু এখন তিস্তায় অস্তিত্ব রক্ষার ন্যূনতম পানিটুকুও নেই। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিনিধির ভাষ্যমতে, ফসলের মাঠ, উঁচু সড়ক, বহুতল ভবন, ব্রিজ-কালভার্ট সবই আছে তিস্তায়। কিন্তু পানির স্বাভাবিক প্রবাহের জন্য নির্মিত তিস্তা ব্যারাজের সামান্যই ভরাট হয়েছে। তাতে নানা শস্য চাষ হচ্ছে। আনন্দ ভ্রমণে আসা দর্শনার্থীরা এখন সেখানে নৌভ্রমণের বদলে বালুতে হেঁটে বেড়ায়।
পানির হিস্যা নিয়ে দেশে-বিদেশে আলোচনায় থাকা তিস্তা নদী দখলে-দূষণে এখন মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় এটিকে রক্ষায় সর্বাত্মক উদ্যোগ না নিলে অচিরেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। যে নদীর ভাঙনে আশপাশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো, সেটি এখন প্রায় অস্তিত্বহীন। প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধির পেছনে রয়েছে এ অঞ্চলের নদীগুলোর অবদান। নদী দখল করে নদীমাতৃক বাংলার প্রাণসূত্রকেই হত্যা করা হচ্ছে। নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করে উচ্চ আদালত এটি রক্ষায় সতর্ক হতে নির্দেশনা দিয়েছেন; নদী দখলদারদের তালিকা করার কথাও বলেছেন আদালত। তালিকা হচ্ছেও। এ অবস্থায় তিস্তার এ অবস্থা দুঃখজনক। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর উচিত নাব্য রক্ষা ও পাললিকীকরণ, সেচব্যবস্থা এবং নদীর তীর সংরক্ষণে জরিপ পরিচালনা ও ব্যবস্থা গ্রহণে মনোযোগ বাড়ানো। তাহলে তিস্তাসহ অন্য নদ-নদী রক্ষা অসম্ভব নয়।