Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:18 am

তিস্তা সংলগ্ন এলাকার বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান

এখন বন্যার সময় নয়। কিন্তু অসময়ের বন্যা-ভাঙনে প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন নদী-তীরবর্তী মানুষ। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘তিস্তার পানি নেমে গেছে, রেখে গেছে ক্ষত’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় পানি বাড়ে তিস্তায়। বুধবার সকাল ৯টায় তিস্তার ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বাড়ে। বেলা ৩টার দিকে বাড়ে ভাটির সব নি¤œাঞ্চলে। এদিন হঠাৎ ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। পরদিন পানি কমতে থাকে। কমতে কমতে ১১৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু ব্যারাজের ভাটি অঞ্চলে তীব্র পানির চাপে রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর ভেঙে যায়।

দু’দিনে তিস্তাপাড়ের মানুষ দ্রুত তাদের বাড়িঘর ছাড়তে থাকেন। গবাদিপশুসহ হাতের কাছে যা ছিল, তা নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। কেউ আত্মীয়দের বাড়ি, সড়কের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেন। উদ্ধার ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা ছিল না। পানি নামার পর দেখা যায়, আগাম ভুট্টা, পাকা-আধা পাকা ধান, চরের মসলা জাতীয় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নিচু সড়কগুলো ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে তীব্র স্রোত গেছে। তিস্তাপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বলছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে একবেলা-দু’বেলার রিলিফ চান না তারা। তারা চান তিস্তার বাঁধ দিয়ে স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দকৃত সহায়তা অপ্রতুল। ঘরবাড়ি সব কিছু ভেঙে গেছে। ঘরবাড়ি ঠিক করার টাকা নেই। নদীতীরের মানুষজন প্রান্তিক পর্যায়ের। তারা কষ্টে-সৃষ্টে কোনো রকমে জীবনযাপন করেন। বন্যা-ভাঙনে তারা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হন।

তিস্তাপাড়ের জনসাধাণের ভোগান্তির খবর হয়তো এর মধ্যে ঊর্ধ্বতন মহলের গোচরীভূত হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও ত্রাণ পাঠানো হবে। তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করতে হবে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

বানভাসি মানুষ অভাবে ও অর্ধাহারে-অনাহারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিনযাপন করছেন। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে নাগরিকদেরও। সাধ্যমতো দুর্গতদের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যেতে পারে। সাহায্য-সহযোগিতা যেন লোক দেখানো বা ফটোসেশনের জন্য না হয়।

অতীতে লক্ষ করা গেয়ে, বিচ্ছিন্নভাবে সহায়তায় কেউ বারবার পায়, কেউ একবারও পায় না। এমন যেন না হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য অর্থ তহবিল সংগ্রহ, সাহায্য-সহযোগিতা ও বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়নকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী দলকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ-সার, কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যন্ত এলাকায় মেডিকেল টিম পাঠাতে হবে। সাময়িক সহায়তা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষও দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনার স্থায়ী সমাধান চান। সরকার সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।