Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 5:36 pm

তীব্র ডেঙ্গু কী করে বুঝবেন

ডেঙ্গু হলে করণীয়: পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শরবত, ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন, জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা-বেদনানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না।

তীব্র ডেঙ্গু কী করে বুঝবেন: করোনার উচ্চ সংক্রমণের মধ্যে এই বর্ষায় ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি দেশের চিকিৎসাব্যবস্থাকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। হাসপাতালগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ। মৃত্যুও হচ্ছে অনেক। ডেঙ্গুও করোনার মতো ভাইরাসজনিত রোগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর লক্ষণ তেমন প্রকাশ পায় না। প্রতি চারজনের একজনের মধ্যে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেয়। কারও হয় মৃদু, কারও মধ্যে দেখা দেয় ভয়ানক লক্ষণ। মৃদু লক্ষণগুলো অন্য সাধারণ রোগের মতোই।

জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে বিশেষত চোখের পেছনের দিকে ব্যথা, মাংসপেশি, হাড় ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা প্রভৃতি হলো ডেঙ্গুর লক্ষণ। তবে জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীরে ছোপ ছোপ দাগ এই তিনটি ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ। এসব লক্ষণ সাধারণত দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠে।

তবে কিছু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। ডেঙ্গুর ভয়ানক বিপদচিহ্নগুলো হলো তীব্র পেটব্যথা, দিনে তিনবারের বেশি বমি হওয়া, কিছু খেতে না পারা, নাক, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড দুর্বলতা, অস্থিরতা কিংবা খিটখিটে ভাব, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন, অসংলগ্ন কথাবার্তা, তাপমাত্রায় বিশাল তারতম্য, জ্বর থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে যাওয়া, চার থেকে ছয় ঘণ্টা ধরে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা না হওয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, রক্তের হেমাটোক্রিট ২০ শতাংশ কমে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

ডেঙ্গুর লক্ষণ তীব্র হলে বাসায় চিকিৎসা করার সুযোগ নেই। এমন রোগীদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা নিতে হবে। তীব্র ডেঙ্গুতে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, রোগীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ থেকে শুরু হতে পারে রক্তক্ষরণ। দ্রুত রক্তের অণুচক্রিকা (প্লাটিলেট) কমে যেতে পারে। সাধারণ ডেঙ্গুর কোনো নির্ধারিত চিকিৎসা নেই।

কারও ডেঙ্গু হলে করণীয়: পূর্ণ বিশ্রাম। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান। শরবত, ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন পান, জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, আইবোপ্রোফেন কিংবা ব্যথা-বেদনানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। এগুলো ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর সেরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর যদি শরীর আরও বেশি খারাপ হতে থাকে, তবে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে, রক্ত পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা ও হেমাটোক্রিটের পরিমাণ জেনে নিতে হবে, রক্তের অণুচক্রিকা কমতে থাকলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, অণুচক্রিকা ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে কিংবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে রক্ত দিতে হবে।

লে. কর্নেল নাসির উদ্দিন আহমদ

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সিএমএইচ, ঢাকা