Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:52 pm

তীব্র শীতে কদর বেড়েছে গরম কাপড়ের

প্রতিনিধি, রাজশাহী : রাজশাহী মহানগরসহ জেলার আট উপজেলায় তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে সপ্তাহখানেক ধরে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শীতের তীব্রতায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে।  এতে চরম বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষজন। তারা শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড় পরছেন।

একই সঙ্গে শীতের কারণে নগরীসহ জেলা ও উপজেলা শহরগুলোয় ফুটপাতে বেশ জমে উঠেছে পুরোনো গরম কাপড়ের বিক্রি। অভিজাত কাপড়ের দোকানগুলোয়ও ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। এতে যেমন গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে, ঠিক তেমনি দোকানগুলোয় বিক্রি বেড়েছে আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোয়েটার, জ্যাকেট, হুডি, ব্লেজার, শাল, মাফলারসহ বিভিন্ন গরম পোশাকের কদর প্রতিদিনই বাড়ছে। ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষার জন্য গরম কাপড়ের পাশাপাশি হাত ও কান টুপির বিকল্প দেখছেন না পথচারীসহ এলাকাবাসী।

শীতের পোশাক বিক্রেতারা বলছেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড়ের কদর বেড়েছে। পাশাপাশি হাত ও পায়ের মোজা, মাফলার ও মাথার গরম টুপির চাহিদাও রয়েছে অনেক। এসব দোকানের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোয়ও বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ। আর তীব্র শীত নিবারণের জন্য এসব দোকানে ভিড় করছে শীতার্ত মানুষ। অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে এসব পণ্যের বিক্রিও।

রেলেগেট এলাকায় শীতের পোশাক বিক্রেতা আফতাব আহমেদ বলেন, দেড়-দু মাস থেকে শীতের পোশাক বিক্রি শুরু করেছি। এত দিন তেমন বেচাকেনা ছিল না। কারণ তেমন শীত ছিল না। অপেক্ষায় ছিলাম কবে শীত বাড়বে। এখন শীত পড়তে শুরু করেছে, তাই বেচাকেনাও বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দিনে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যেত। এখন দৈনিক পাঁচ-সাত হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। আশা করি আগামী এক সপ্তাহ এমন বেচাকেনা হলে চালান উঠে আসবে।

আরেক শীতের কাপড় বিক্রেতা বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার শীত কম, তাই বেচাকেনাও তেমন সুবিধার নয়। তবে এই এলাকায় যে কয়জন বিক্রেতা আছে, সবার কমবেশি ভালো বিক্রি হয়। এখান থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দিয়ে ভালো ও মানসম্মত শীতের কাপড় কেনা যায়, যেটা শপিং মলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এজন্য এখানে সবাই আসে।

দিনমজুর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তিনি শহরে কাজের সন্ধানে এসেছেন। তার দাবি কাজ কম হচ্ছে তাদের। তারপর শীত উপেক্ষা করে তারা প্রতিদিন কাজের সন্ধানে শহরে আসছেন। আগে প্রতিদিন কাজ হলেও এখন এক দিন হলে আরেক দিন হয় না।

নগরীর রেলগেট এলাকা থেকে ছেলেমেয়েদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন গৃহিণী আফসানা আকতার। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সবারই আগের বারের শীতের কাপড় ছিল। সেটাই পরতে শুরু করেছি। আমার ছেলে কলেজে পড়ে, মেয়ে হাইস্কুলে পড়ে। তারা জেদ ধরেছে শীতের নতুন পোশাকের জন্য। তাই বিকালে বের হয়েছি ওদের পছন্দের জ্যাকেট হুডি কিনতে। ফুটপাথে কাপড়ের মান অত বেশি খারাপ নয়। তা ছাড়া ফুটপাথে পছন্দনীয় জামাকাপড় পাওয়া যায়। তাই এখানে আসা।

আরেক শীতের পোশাক ক্রেতা আমান আল সাকিমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, এখানে আসার আগে আমি প্রথমে নিউমার্কেটে গিয়েছি। সেখানে একটা গেঞ্জির দাম চেয়েছে ৫০০ টাকা। দোকানদার ৪০০ টাকার কমে দিতে রাজি হননি। সেই গেঞ্জি এখান থেকে কিনেছি ২০০ টাকা দিয়ে। ফুটপাথ বলে এটাকে অন্যভাবে দেখার কিছু নেই। ফুটপাথে যে আমরা শীতের কাপড় পাচ্ছি, এটাই আমাদের জন্য অনেক।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া সকাল ৯টায় বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৯ শতাংশ। রাজশাহীতে এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ২ দশমিক ৩ ডিগ্রি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমায় এই অঞ্চলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীত। তবে দিনের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

গত সোমবার  দিনভর আকাশে মেঘ ও চারপাশে কুয়াশার উপস্থিতি কম থাকলেও রাতের দিকে শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। এতে গত রোববারের তুলনায় সোমবার এক দিনের ব্যবধানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছিল শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়েছিল শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি।

রাজশাহীতে সোমবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। আর গত রোববার রাজশাহীতে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আকাশ পরিষ্কার আছে, সূর্যের দেখা মিলেছে সকালে।