শেয়ার বিজ ডেস্ক: তুরস্কে গত মাসে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি ডলার) ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। জাতিসংঘের এ অঙ্গসংগঠনের এক কর্মকর্তা লুইসা ভিনটন এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানিয়েছেন। খবর: রয়টার্স।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। কম্পনের উৎসস্থল ছিল তুরস্কের গাজিয়ানতেপ প্রদেশের পূর্ব দিকে নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার গভীরে। এরপর দফায় দফায় আরও কয়েকটি ভূমিকম্প হয়। এতে দুই দেশে ধসে পড়ে হাজার হাজার ভবন। সেই গাজিয়ানতেপ প্রদেশ থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষয়ক্ষতির এ হিসাব দিয়েছেন লুইসা ভিনটন। গত মাসের শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে তুরস্কের এ শহরটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আগামী সপ্তাহে বড় দাতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে তুরস্কের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এ তথ্য জানাল ইউএনডিপি।
লুইসা ভিনটন বলেন, ভূমিকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত করা হিসেবে এটি স্পষ্ট যে, সরকারের উপস্থাপিত এবং … আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তায় প্রস্তুতকৃত মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলারের বেশি হবে। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তুরস্কে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ। এ পর্যন্ত ভূমিকম্পে তুরস্কে ১ লাখ ৭৩ হাজার ভবন ধসে গেছে বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরপর ক্ষয়ক্ষতির অস্থায়ী পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। ভিনটন বলেন, ওই পরিসংখ্যানে শুধু তুরস্কের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে ভূমিকম্পপীড়িত জীবিত মানুষ ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে আগামী ১৬ মার্চ ব্রাসেলসে একটি দাতা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এর আগে ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কের প্রত্যক্ষ ক্ষয়ক্ষতি ৩৪ দশমিক ২ বিলিয়ন (৩ হাজার ৪২০ কোটি) ডলার বলে অনুমান করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু সংস্থাটি এখন বলছে, ভূমিকম্পবিধ্বস্ত এ দেশটিতে পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের খরচ অনেক বেশি হবে। ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত তুরস্কের মোট দেশীয় পণ্যের ক্ষতিও বাড়তি যোগ হবে।
ভিনটন আরও বলেন, ইউএনডিপি, বিশ্বব্যাংক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় তুরস্ক সরকার অনেক বেশি ক্ষতির হিসাব করেছে। ক্ষয়ক্ষতির ধারণাটি সম্পন্ন হলে তা আগামী সপ্তাহে দাতা সম্মেলনের ভিত্তি হয়ে উঠবে। পুনরুদ্ধারের খরচের পাশাপাশি উন্নত ও আরও পরিবেশগতভাবে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণসহ মোট ক্ষয়ক্ষতির বা খরচের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত তুরস্কে ১৯৯৯ সালে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর ‘ভূমিকম্প ট্যাক্স’ আরোপ করে সরকার। বলা হয়েছিল, এমন বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটলে সেই ট্যাক্সের অর্থ খরচ করে উদ্ধারকাজ চালানো হবে এবং পুনর্গঠনে ব্যয় করা হবে। বর্তমানে এ ট্যাক্স বাবদ তোলা ৮৪ বিলিয়ন তার্কিস লিরা (৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার) সরকারি কোষাগারে জমা। এ অর্থ খরচ করে দুর্যোগপ্রতিরোধী কার্যক্রম ও জরুরি পরিষেবার অবকাঠামো নির্মাণের কথা ছিল।
ভিনটন তুরস্কের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হাতায় প্রদেশের অবস্থাকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, তুরস্কের এ প্রদেশে লাখ লাখ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। তিনি যোগ করেন, ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন অনেক বেশি, কিন্তু (অর্থ) সংস্থান দুষ্প্রাপ্য।
তুরস্কের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া প্রায় ২০ লাখ মানুষকে অস্থায়ী বাসস্থানে রাখা হয়েছে বা ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তাঁবুতে বাস করছেন এবং আরও ৪৬ হাজার মানুষকে কনটেইনার হাউসে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অন্য দুর্গতরা ডরমেটরি ও গেস্টহাউসে বাস করছেন বলে সরকার জানিয়েছে।