তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা

স্বাবলম্বী দেড় শতাধিক পরিবার হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের ছোট্ট গ্রাম ভাটিপাড়া। রত্না নদীর অববাহিকায় দুই হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত গ্রামটির অধিবাসীর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। জেলে সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রামটির মানুষের প্রধান পেশা
ছিল মৎস্য আহরণ। এতেই চলত তাদের জীবন-জীবিকা। অভাব ছিল যাদের নিত্যসঙ্গী। টানাপড়েনের সংসারে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা চালানোর সাধ্য ছিল না তাদের। এখন আর সেদিন নেই। তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে ওই গ্রামের অন্তত দেড়শ পরিবার। শুধু ভাটিপাড়া গ্রামই নয়, অল্প পুঁজিতে ভালো লাভ হওয়ায় এ পদ্ধতিটি ছড়িয়ে পড়ছে পুরো উপজেলায়।
জানা গেছে, তুষ পদ্ধতিতে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে মাত্র এক মাস সময় লাগে। প্রথমে ডিমগুলোকে রোদে দিতে হয়। একদিন রোদ লাগানোর পর সেগুলো সিলিন্ডারে বসানো হয়। এ সিলিন্ডার তৈরি করা হয় ধাড়ি (ছাঁচ) দিয়ে। এটি ধানের তুষ দিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়। একটি সিলিন্ডারে এক হাজার ডিম রাখা যায়। সিলিন্ডারের পাশে একটি স্থানে তুষে আগুন দিয়ে তাপ দেওয়া হয়। প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর ডিমগুলো নড়াচড়া করতে হয়। এভাবে ২০ থেকে ২৫ দিন তাপ দেওয়ার পর ডিমগুলো একটি চটে বিছিয়ে রাখা হয়। পরে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। এক হাজার ডিম থেকে গড়ে ৭০০ বাচ্চা হয়। ভালো ডিম হলে বাচ্চার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
প্রতিটি ডিম আট থেকে ১০ টাকা দরে কেনেন খামারিরা। একদিনের হাঁসের বাচ্চার দাম হয় সাধারণত ২০ থেকে ২৫ টাকা। ডিমের দামের ওপর বাচ্চার দাম অনেক সময় কম-বেশি হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে বাচ্চা ফোটানোর কারণে এখানকার বাচ্চার চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী ও পাইকার এখান থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করেন এখন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, শুধু ভাটিপাড়া গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার হাঁসের বাচ্চা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে।
হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনকারী রাজেশ চন্দ্র দাস বলেন, তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে ভাটিপাড়া গ্রামের সব পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। কম টাকায় ভালো লাভ হওয়ায় এ ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠছে আশেপাশের গ্রামের মানুষও। তিনি আরও বলেন, আমরা পুরুষরা শুধু ডিম কিনে এনে দিই। বাকি কাজ মহিলারাই করে। আমরা হাল-চাষসহ অন্য কাজ করি।
মালতি রানি দাস বলেন, এ কাজের জন্য তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। মাঝেমধ্যে কাজ করলেই হয়। ডিমগুলো নড়াচড়া করানো ছাড়া আর কোনো কাজই নেই। তাই আমাদের পাশাপাশি সন্তানরাও কাজটি সামলে নিতে পারে।
শঙ্কর দাস বলেন, হাঁসের বাচ্চা ফুটিয়ে আমরা অনেক ভালো আছি। তবে সরকার যদি এ ব্যাপারে নারীদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিত, তাহলে আমাদের আরও উন্নতি হতো।
এ ব্যবসায় অগ্রগতির জন্য খামারিদের পাশে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সব সময় রয়েছে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. ইসহাক মিয়া। তিনি বলেন, খামারিদের প্রশিক্ষণসহ হাঁসের বাচ্চার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। একই সঙ্গে তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি আমরা।

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০