তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে জনবল নিয়োগে ব্যবস্থা নিন

‘গোবিন্দগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: থাকার কথা ৩০ চিকিৎসক, আছেন মাত্র সাতজন’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিনিধি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির যেসব তথ্য তুলে ধরেছেন, তাতে প্রতীয়মান হয় এটি সেবা গ্রহীতাদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারছে না। মাত্র সাত চিকিৎসক দিয়ে জোড়াতালিতে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। চিকিৎসকের ৩০টি পদের মধ্যে ২৩টিই ফাঁকা পড়ে আছে। গাইনি ও অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া অন্য কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই সরকারি এই হাসপাতালে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১১ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় হাসপাতালটি। তবে শিশু, চর্ম ও যৌন, চক্ষু, মেডিসিন, সার্জারি, কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিক্স এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবের জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদ শূন্য রয়েছে প্রায় পাঁচ বছর ধরে। ডেন্টাল সার্জন ও ইউনানি মেডিকেল অফিসার পদেও নেই কোনো চিকিৎসক। এতে উপজেলার সাত লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য মানবসম্পদ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আমাদের সংবিধানের একাধিক অনুচ্ছেদে চিকিৎসাসেবা, জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিনবদলের সনদে’ জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি যুগোপযোগী করা, পুষ্টি, শিশু ও মাতৃমঙ্গল নিশ্চিত করা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করাসহ কয়েকটি অঙ্গীকার করা হয়েছে। পরপর কয়েকটি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে কমবেশি উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবার প্রসারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। শিশু ও গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

এটি ঠিক, আমাদের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এখনও এ ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা সরকারের সাফল্যকে ম্লান করতে পারে। বর্তমান সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠাকে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দাবি করলেও এখনও বিপুল সংখ্যক মানুষ এর বাইরে রয়েছেন।
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর পাশাপাশি সেগুলো থেকে মানসম্মত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকারি হাসপাতালগুলো দেশের দরিদ্র মানুষের ভরসা। যে ২২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে, তাদের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেয়া সম্ভব নয়।

হাসপাতালটি এত কম জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, এর দায় এড়াতে পারেন না জেলার সিভিল সার্জন। যখন উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের উপযোগী স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা, ই-গভর্ন্যান্স, ই-হেলথ ও টেলিমেডিসিন সেবা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করেছে, তখন প্রত্যন্ত এলাকার হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা আশা করি, নতুন সরকার সরকারি হাসপাতালগুলোয় মানসম্মত সেবাদান নিশ্চিত করে জনসাধারণ, বিশেষ করে দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০