ইসমাইল আলী: বাংলাদেশকে দুই দফায় ২৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার রাষ্ট্রীয় ঋণ (এলওসি) অনুমোদন করেছে ভারত। প্রথম এলওসিতে ২০১০ সালে ১৫ প্রকল্পে ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দেয় দেশটি। পাশাপাশি ২০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় গত বছর ১৪ প্রকল্পে ২০০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে ভারত। এবার তৃতীয় এলওসির জন্য ২৬টি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এগুলোর জন্য সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার।
তৃতীয় এলওসির প্রকল্প চূড়ান্তে আগামীকাল রোববার আন্তমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করেছে ইআরডি। এতে ১১ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে অনাপত্তিপত্র বা মতামতও জানতে চাওয়া হয়েছে।
গত ৬ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত চিঠি ইস্যু করে ইআরডি। এতে বলা হয়, ‘ডিসেম্বর ২০১৬-এর মাঝামাঝি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সফরকালীন সময়ে অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে নতুনভাবে ভারতীয় ঋণ প্রদানের ঘোষণা আসতে পারে মর্মে ধারণা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বর্ণিত এমওইউতে সম্ভাব্য প্রকল্পের একটি তালিকাও সংযোজিত হবে। এ ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরসংশ্লিষ্ট কতিপয় প্রকল্পের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত এসব প্রকল্পের তালিকা চূড়ান্তকরণে আগামী ১১ ডিসেম্বর সাড়ে ১০টায় ইআরডিতে আন্তমন্ত্রণালয় সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভারতীয় ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্মতি/অনাপত্তিসহ উপযুক্ত প্রতিনিধি প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
যদিও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর স্থগিত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আগামী ফেব্রুয়ারিতে সফরসূচি চূড়ান্ত করা হতে পারে। সে সময়ই প্রকল্পগুলোর জন্য চুক্তি সই হবে বলে জানান ইআরডি সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, তালিকায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ছয়টি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের। এছাড়া রেলওয়ের পাঁচটি প্রকল্প, সড়ক পরিবহনের চারটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চারটি, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও পানিসম্পদের দুটি করে এবং একটি করে আইসিটি, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের। এর মধ্যে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। বাকি সাত প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ না হলেও কমপক্ষে দুই বিলিয়ন ডলার দরকার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নৌপরিবহনের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: পায়রা বন্দরের ড্রাই বাল্ক কয়লা টার্মিনাল, পায়রা বন্দরের বহুমুখী (মালটিপারপাস) টার্মিনাল, চট্টগ্রামের বে কনটেইনার টার্মিনাল, চট্টগ্রাম ড্রাই ডক, চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ পরিকল্পনা এবং স্থল শুল্ক স্টেশনকে ইনল্যান্ড কনটেইনার বন্দরে রূপান্তর।
রেলওয়ের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছেÑভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, ফেনী-বিলুনিয়া রেলপথ নির্মাণ, ৩০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন ক্রয় ও ঈশ্বরদী আইসিডি নির্মাণ। তালিকার দুটি প্রকল্প নিয়ে আপত্তিপত্র তৈরি করেছে রেলওয়ে। এগুলো হলো: ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ ও ফেনী-বিলুনিয়া রেলপথ নির্মাণ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ভাঙ্গা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করবে যুক্তরাজ্যের ডিপি রেল। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি করা হয়েছে। আর ফেনী-বিলুনিয়া রেলপথ ভারতের অনুদানে নির্মাণের কথা রয়েছে। বাকি তিন প্রকল্পে ভারতের ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সড়ক বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত চার প্রকল্প হলো: ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার যানজট হ্রাসে ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ, বেনাপোল-যশোর-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, রামগড় থেকে বারৈয়ারহাট সড়ক চার লেন নির্মাণ ও কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সরাইল-আখাউড়া সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো হলো: সিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ, এনই-বাংলাদেশ-এনইআর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উন্নয়ন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে এক লাখ এলইডি সড়কবাতি স্থাপন এবং মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। এছাড়া সৈয়দপুর ও খুলনা বিমানবন্দর উন্নয়ন, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার, আশুগঞ্জ-জকিগঞ্জ নৌরুট ড্রেজিং, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন, এক হাজার উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কঠিন বর্জ্য (সলিড ওয়েস্ট) ব্যবস্থাপনার জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ প্রকল্পগুলোও ভারতের ঋণে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
Add Comment