তৃতীয় পক্ষ নেমেছে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরো

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘…কিন্তু আমরা এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা আরও ভয়ানক। এর ভেতরে তৃতীয় পক্ষ চলে এসেছে। স্কুলের পোশাক ও আইডি কার্ড বিক্রি বেড়ে গেছে হঠাৎ করে। কাজেই এগুলো কারা করছে, এরা কি আদৌ ছাত্র? কখনও মুখে কাপড় বেঁধে এদের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে।’ গতকাল গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। সূত্র: বিডিনিউজ
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসছে এখানে। তাদের কাজটা কী হবে? সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা। যখনই আমি এটা দেখলাম তখনই আমি আতঙ্কিত এই শিশুদের নিয়ে। যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারতে পারে। যারা অনিক, হৃদয় এদের মতো মেধাবী ছাত্রদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে পারে, তারা কি না পারে এদেশে?’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে কারণেই অনুরোধ শিক্ষক, অভিভাবক, পিতামাতা, আপনাদের সন্তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাদের। কাজেই তাদের রাস্তা থেকে তুলে স্কুলে পাঠান, কলেজে পাঠান। তারা পড়াশোনা করুক। তৃতীয় শক্তি এরা মানুষ নয়। এরা পারে না এমন কোনো কাজ নেই। অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টিকারীরা যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে।’
ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু করেছি। তার আগে ছোট বাচ্চারা করেছে। খুব ভালো কথা। এখন আর তাদের ট্রাফিক দেখার দরকার নেই। তারা যদি কেউ স্বেচ্ছা সার্ভিস দিতে পারে, তাদের আমরা কাজে লাগাতে পারি। গাড়ির কাগজপত্র দেখা, ফিটনেস দেখাÑএটা পুলিশের দায়িত্ব। তারা দেখবে।’
শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। গত কয়েক দিন পর থেকে তারা যা যা করার করেছে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করা; আমি জানি না, তারা কতটুকু এটা বোঝে। পুলিশ, র?্যাব সবাই কিন্তু ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে এতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এমনকি তারা যা বলছে, এমনকি মন্ত্রী-এমপির গাড়িতে তারা যা যা করছে তারা কিন্তু তা মেনে নিচ্ছে, তারা বাধা দেয়নি। কারণ তাদের অনুভূতি, তাদের সেন্টিমেন্ট আমরা বুঝতে পারি। এরকম একজন সহপাঠী মারা গেলে কী অনুভূতি হয় তা আর কেউ না বুঝুক আমার চেয়ে বেশি কেউ বোঝে না, কারণ আমি আমার পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এ রকম বহু শিশু অগ্নিসন্ত্রাসে আহত-নিহত হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় নেমেছে, আমরা তাদের কোনো রকম বাধা দিইনি; বরং সহযোগিতা করেছি। পুলিশের হোন্ডা জ্বালিয়ে দিয়েছে, বাস জ্বালিয়েছে। অনেক কিছু, কিন্তু সবাই ধৈর্য ধরেছে।’ তবে একটা পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনাÑ‘একটা পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে। সেটা কিন্তু তারা করে যাচ্ছেÑএমন একটা পরিস্থিতিতে তারা কোনোমতে একটা অবস্থান তৈরি করতে পারে কি না। ফেসবুকে তারা গুজব ছড়াল আওয়ামী লীগ অফিসে নাকি চারজনকে মেরে লাশ রেখে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ অফিসে যে আক্রমণ, এই আক্রমণটা কারা করল? আমাদের ১৭-১৮ কর্মী সেখানে আহত, তারা হাসপাতালে। তাদের (হামলাকারী) ব্যাগের ভেতরে পাথর। তারা ছাত্র যদি হয়, তাহলে তাদের ব্যাগে বই থাকবে। পাথর থাকবে কেন? আর সেই পাথর আওয়ামী লীগ অফিসে তারা ছুড়ে মেরেছে।’ শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, ‘বিডিআর গেটে হামলা। সেখানে ফাঁকা গুলি হচ্ছে। এই অস্ত্রটা কোত্থেকে এলো? কারা দিল? অপপ্রচার চালিয়ে দেশের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং এটা যারা করতে পারে তারা যে কোমলমতি শিশুদের ওপর আঘাত করবে না, ক্ষতি করবে না? যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে, তারা তাদের স্বার্থে যেকোনো কিছু করতে পারে। ছোট শিশুকেও তো তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেজন্য আমি সব অভিভাবক, পিতামাতাÑতাদের আমি অনুরোধ করব তারা যেন শিশুদেরকে ঘরে রাখে। তারা যেটুকু করেছে যথেষ্ট। আমরা তাদের বাধা দিইনি। কিন্তু এখন এই তৃতীয় পক্ষ যে কোনো অঘটন যদি ঘটায়, তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? সেজন্য আমি আপনাদের সতর্ক করতে চাই যে, দয়া করে আপনারা আপনাদের ছেলেমেয়েদের এবং প্রত্যেকটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে আমি অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের ছাত্রদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেন।’ ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীও ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আজকের ডিজিটাল প্রযুক্তিতে মানুষের সেবা যেমন বাড়ছে, আবার কিছু কিছু ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভেতর একটা অশান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেখানে আমরা বলব, কেউ গুজবে কান দেবেন না, বা এই মিথ্যা অপপ্রচারে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। যা কিছু শোনেন আগে যাচাই করে নেবেন। বিশেষ করে আমাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রী, যুবসমাজ তাদের প্রতি আমাদের এই আহ্বান থাকবে।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০