নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় একটি বগি থেকে মা-শিশুসহ ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এই ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার জানান, আগুনের খবর ভোর পাঁচটা ৪ মিনিটে পাওয়া গেছে। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের তিনটি ইউনিট পাঁচটা ১২ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ প্রহরায় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সকাল ছয়টা ৪৫ মিনিটে আগুন নির্বাপণ হয়।
নিহত চারজনের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেনÑনাদিরা আক্তার পপি (৩৫) এবং তার তিন বছরের শিশু সন্তান ইয়াসিন। নাদিরার স্বামী কারওয়ান বাজারের একজন হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। ঘটনার সময় নাদিরা আক্তারের ভাই এবং তার আরও এক ছেলে ট্রেনে ছিল। তারা ট্রেন থেকে নামতে পারলেও নাদিরা নামতে পারেননি। নিহত অপর দুইজন পুরুষ। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বকুল আক্তার নামের এক যাত্রী জানান, আগুনের কারণে তিনি তাড়াহুড়ো করে ট্রেন থেকে নেমে আসেন। ট্রেনে তার সঙ্গে ছেলে খোকন ও নাতনি শারমিন (২) ছিল। তিনি ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না।
তেজগাঁও রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার এস এম পর্বত আলী বলেন, ভোর ৪টা ৫৮ মিনিটে ট্রেন তেজগাঁও আসে। ৬টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ছেড়ে আসার পথে কোথাও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এখানে ট্রেনটি থামার কথা ছিল না। তবে আগুন দেখে ‘সিগনাল ডেনজার’ দিয়ে ট্রেন থামানো হয়। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে খবর দেয়া হয়। আগুনে ‘ছ, জ ও ঝ’ কোচ পুড়ে গেছে। তিনটিই এসি কোচ।’
ট্রেনটি তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, ট্রেনের দুই কোচের মাঝের স্থানে প্রথমে আগুন দেখতে পান রেলকর্মীরা। ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালানো হয়। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং পাশের কোচগুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা দ্রুত নামার চেষ্টা চালান। তবে যাত্রীদের কেউ কেউ বিষয়টি বুঝতে পারেননি। তাদের কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। এটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে নাশকতা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন যাত্রীদের বরাত দিয়ে জানান, ট্রেনটি নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় আসছিল। বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর যাত্রীরা পেছনের বগিতে আগুন দেখতে পান। এরপর চালক ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে থামান।
নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিরাপদ রেলযাত্রাকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেছেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো যে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছে, এই সময়ে রেলে সহিংসতা বাড়ছে। রেলকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে ফেলে হুমকি তৈরি করা হচ্ছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
রেলমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও নাশকতা নিরাপদ রেল চলাচলের জন্য হুমকি। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যোগাযোগব্যবস্থায় যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল, সেখানে একমাত্র রেল চলাচল স্বাভাবিক ছিল। এখন রেল যোগাযোগব্যবস্থায় পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, যাত্রী হয়ে ট্রেনে উঠে এরপর নিরাপদ রেলে ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বাসের বদলে ট্রেনকে এখন প্রধান হাতিয়ার করা হচ্ছে। পরিকল্পিত দুর্ঘটনা ঘটাতে ফিশপ্লেট খুলে নেয়া হচ্ছে।
তবে ভোরে তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনাকে সুপরিকল্পিত নাশকতা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, নাশকতাকারীরা মানবসভ্যতার শত্রুপক্ষ, এরা মানবজাতিকেই অস্তিত্বহীন করতে চায়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভোরে যারা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন দিয়ে চারজন যাত্রীর প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দিলো তারা নিঃসন্দেহে মানুষ নামের কলঙ্ক। মহল বিশেষের প্রশ্রয় ব্যতিরেকে এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজ করা সম্ভব নয়। মূলত চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এটি কূটচাল কি না তা নিয়ে জনগণের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে।
এদিকে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি মনে করি যারা অবরোধ-হরতাল দিচ্ছে, তারাই এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তারা এভাবে ট্রেনে নাশকতা করেছিল।’
বিএনপি ও যুগপৎ সঙ্গীদের হরতালের মধ্যে তেজগাঁওয়ে রেলে আগুনের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা রেলে আগুন দিয়ে চারটি প্রাণ খুন করেছে, তাদের ক্ষমা নেই।