শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেশি রাখতে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মধ্যে উৎপাদন হ্রাস নিয়ে যে সমঝোতা হয়েছিল তার মেয়াদ আরও বাড়বে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে হামাস ও ইসরাইলের লড়াইয়ের মধ্যেও সৌদি আরব ও রাশিয়া ‘খুব সম্ভবত’ তেল উৎপাদন হ্রাসের ধারা চালিয়ে যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এ সংকটে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে উঠে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তেলের দাম বাড়লে রাশিয়ার সুবিধা, তারা সেখান থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারবে।
গত বছর ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ইউরোপে রাশিয়ার তেল বিক্রি অনেকটা কমে যায়। এরপর তারা চীন, ভারতসহ বিভিন্ন বিকল্প বাজারে তেল বিক্রি শুরু করে। এখন তেলের দাম আবার বাড়লে পশ্চিমাদের উদ্বেগ আরও বাড়বে। কারণ তারা এমনিতেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ভøাদিমির পুতিন বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মস্কোর চুক্তি তেলের বাজারের পূর্বাভাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং শেষ বিচারে মানবজাতির কল্যাণেও তার গুরুত্ব রয়েছে।
গত শনিবার ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস হঠাৎ ইসরাইলে হামলা চালালে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারের গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করতে মস্কোয় আলোচনায় বসেন রাশিয়া ও সৌদি আরবের কর্মকর্তারা। বৈঠকে রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক ও সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান যোগ দেন। জ্বালানিবিষয়ক রাশিয়ার সম্মেলনের আগে তারা এ বৈঠকে অংশ নেন।
হামাসের হামলার পর চলতি সপ্তাহে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো। হামলার কারণে বাজারে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে তেলের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। পণ্য বাণিজ্যের বৃহৎ কোম্পানি মারকুরিয়ার উপপ্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মজিদ সেনুদা সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত আরেক বৈঠকে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়লে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে উঠতে পারে। তিনি মনে করেন, স্বাভাবিক অবস্থায় তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে ওঠার কথা নয়। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে এখন যা ঘটছে, তাতে দাম সেই পর্যায়ে উঠতে পারে।
এদিকে গত মাসে অপরিশোধিত তেলের দাম ৯০ ডলার পেরিয়ে যাওয়ার পর আবার কিছুটা কমেছিল। তখনই বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারীরা ঘোষণা দিয়েছিল, সম্মিলিতভাবে তাদের তেল উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। বছরের শেষ ভাগ পর্যন্ত সৌদি আরব ও রাশিয়া বৈশ্বিক চাহিদার ১ শতাংশ বা দৈনিক ১৩ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াইরত পশ্চিমা নেতারা হতাশ হয়েছেন।
পুতিন বলেছেন, আমাদের কিছু সহযোদ্ধা, বিশেষ করে পশ্চিমা অভিজাতরা তেলের বাজারসহ বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে বিভ্রান্তির বীজ বুনেছেন। এ ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপের নেতিবাচক প্রভাব পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনুভূত হয়। এখন তা সংশোধন করতে হবে। অবশ্যই বলতে হয়, বাজারের দায়িত্বশীল অংশীজনদেরই তা করতে হবে।
গত মঙ্গলবার সৌদি আরব বলেছে, গাজা ও ইসরাইলে পরিস্থিতির যেন অবনতি না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে দেশটি।
তেল বিক্রির ক্ষেত্রে রাশিয়াসহ ভেনেজুয়েলা ও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এই তিন দেশ থেকে কম দামে তেল কিনে লাভবান হয়েছে চীন। এতে চীনের তেল পরিশোধনাগারগুলোর উৎপাদন ও মুনাফা বেড়েছে। ভরটেক্সা ও কেপলারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ইরান, রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে সমুদ্রপথে দৈনিক ২৭ লাখ ৬৫ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে চীন। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন যত তেল আমদানি করেছে, তার চার ভাগের এক ভাগ তারা এই তিন দেশ থেকে আমদানি করেছে। এ প্রক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো পিছিয়ে পড়েছে।