Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 10:07 pm

তেলের দাম কিছুটা কমলেও সবজির বাজার চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কড়া হুঁশিয়ারি ও সয়াবিন তেলের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর বাজারে কমতে শুরু করেছে ভোজ্যতেলের দাম, যদিও সরকারের বেঁধে দেয়া দামে এখনও তা আসেনি। তবে সবজির দাম এখনো চড়াই রয়েছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে ভোজ্যতেলের মূল্য ছিল চড়া, শুক্রবার দাম খানিকটা কমে আসায় বাজারে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন ক্রেতারা।

রাজধানীর বড়বাগ, পীরেরবাগ, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে সুপার পাম তেল প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, আর লিটার ১৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়।

বড়বাগের মুদি দোকানি শওকত হাওদালার বলেন, ‘গত সোমবারও দাম অনেক বেশি ছিল। সয়াবিন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা হয়ে গিয়েছিল। আর পাম তেলের দাম উঠেছিল লিটার ১৭০ টাকা। পাইকারি দাম কমাই আমরাও কম দামে গ্রাহকদের দিতে পারছি।’

আমদানি মূল্য ও বাজার বিশ্লেষণ করে সরকার গত ৬ ফেব্রুয়ারি সয়াবিন তেলের মূল্য বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা এবং পাম সুপার তেল ১৩৩ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা।

বর্তমান বাজারে সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬৮ টাকা। ঘোষিত হারে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে প্রতি লিটারে দাম ৩০ টাকার মতো কমতে পারে বলে ধারণা দেন সয়াবিন তেল আমদানিকারক অন্যতম কোম্পানি সিটি গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা।

এ ছাড়া মার্চ মাস থেকেই সয়াবিন তেল বোতলজাত করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থাৎ, খোলা অবস্থায় কোনো সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না।

এদিকে বাজারে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা ও ‘কারসাজি’ থামাতে শুক্রবার থেকেই মুদি দোকানিদের কাছে পাকা রসিদ নিশ্চিত করতে অভিযান শুরু করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল খোলা সয়াবিন তেলের দাম। এর কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছিল।

এ পরিস্থিতিতে বাজারে নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে বৃহস্পতিবার সয়াবিনে ২৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘জিনিসের দাম যাতে সহনীয় থাকে, সেজন্য আজকে যেসব আইটেমের ওপর ভ্যাট ছিল সেগুলো তুলে নিয়েছি। সরকার থেকে যে পরিমাণ সহযোগিতা করা দরকার সেটা করা হচ্ছে। ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলায় ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে উপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

এদিকে শাকসবজির বাজার ছিল চড়া, আর গরমের শুরুতে তা যেন আরও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আবাদি ক্ষেতগুলো ‘অবসরে যাওয়ায়’ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে বিক্রেতাদের ভাষ্য।

শুক্রবার পীরেরবাগ কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকায়। একইভাবে বরবটি ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, খিরা ৬০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, টমেটো ৫০-৬০ টাকা, ব্রকলি ৪০ টাকা, মুলা/শালগম ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে করলা, ঢ্যাঁড়শ, কাঁচা মরিচ ও লাউসহ আরও কয়েকটি সবজি কেজিতে ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

রাজধানীর কয়েকটি বাজারে দেখা যায়, দাম বাড়ার তালিকায় চালও রয়েছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকার মতো। ভালো মানের ও মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকার মতো।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো। গত সপ্তাহে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া চাল শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া গরিবের মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত সপ্তাহের ৪৮ টাকা কেজি দরের চাল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভালো মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল তারা বিক্রি করছেন ৬৩ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে দুই ২ টাকা বেশি।

রাজধানীর মানিকনগর এলাকার মুদি দোকান ইউসুফ আলী মোটা গুটি স্বর্ণা চাল বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৪৮ টাকা ও মাঝারি আকারের বিআর-২৮ চাল ৫২ টাকা। সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা কেজি দরে।

এদিকে মাছের বাজার আগের মতোই আছে। রুই, কাতল বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোলের কেজি বিক্রি ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি।