তেলের বাজারে কারসাজির বিষয় স্বীকার করল সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরকারের ‘বিশ্বাসের সুযোগ’ নিয়েছেন। বেশি লাভের আশায় পণ্য ধরে রেখে বাজারে সংকট সৃষ্টি করেছেন। আমরা ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম এটাই আমাদের ব্যর্থতা। বিশ্বাস করা ভুল হয়েছে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমরা শিখেছি মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়। মিল মালিকরা কথা রাখলেও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্যতেলের বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিরতায় হতাশা প্রকাশ করে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

এ মাসের শুরুতে ঈদের আগে খুচরা বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় রান্নায় ব্যবহƒত সয়াবিন তেল। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সায় নিয়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকার কাছাকাছি নির্ধারণ করেন মিল মালিকরা। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বাড়তি লাভের জন্য ব্যবসায়ীরা ১০ দিনে ৪০ হাজার টনের মতো সয়াবিন তেল অবৈধভাবে মজুদ করেছেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ধারণা।

তেল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছেÑজানিয়ে টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের যেসব ব্যবসায়ী এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে চিহ্নিত। যখন যেখানে প্রয়োজন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু তারা সংখ্যায় লাখের ওপরে। এটা একটা সমস্যা। ব্যবসায়ীদের এ মজুতদারিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর আস্থা নড়ে গেলেও দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে তার দ্বিমত নেই।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সত্য যতই কঠিন হোক, তা মেনে নিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে তেলের মূল্যবৃদ্ধি মেনে নিন। পাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের এখনকার দামও বিবেচনায় নিতে হবে।

গত ফেব্রæয়ারি মাসে তেলের দাম নির্ধারণের পর আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির ফলে রোজার মধ্যেই আরেকবার দাম পরিবর্তন করা ‘প্রয়োজন ছিল’ বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে রোজায় যাতে মানুষের কষ্ট না হয়, সে জন্য তিনি মিল মালিকদের অনুরোধ করে দাম বৃদ্ধি ‘কিছুটা বিলম্বিত’ করেছিলেন বলে জানান।

মন্ত্রী বলেন, এখন তো দেখছি রোজার ভেতর একবার দাম বৃদ্ধি করাই ভালো ছিল। মিল মালিকরা মেনে নিলেও খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ঠিকই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঈদের পর তেলের দাম বাড়বে, এটা সবাই অনুমান করতে পারছিলেন।

তেলের উচ্চমূল্যে দরিদ্র মানুষ যাতে চাপে না পড়ে, সে জন্য সরকার টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করবে। আগামী জুন মাসে টিসিবি এসব পণ্য সরবরাহ করবে।

একই অনুষ্ঠানে সিটি গ্রæপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, ‘তেলের দাম যখন কম তখন সরকার যদি ৫-৭ লাখ টন মাল কিনে এনে রেখে দেয়। আর বাজার যখন ঊর্ধ্বমুখী হবে তখন সরকার তার স্টক থেকে কিছু মাল রিফাইনারিকে দিয়ে দেয়, তাহলে বাজার স্থিতিশীল থাকে। এসব পরামর্শ আমরা চাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘৩৮ টাকা তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, সিদ্ধান্ত হয়েছে ১৯৮ টাকা, যেটি গত ৫ তারিখে নির্ধারিত হয়েছে। আজকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আছে ২ হাজার ৫০ ডলার টন। গত শুক্রবার এই দামে ক্লোজ হয়েছে। সেটার কস্টিং অ্যাভারেজ করলে ২২২ টাকা লিটারপ্রতি দাম পড়ে। বাড়ানোর সময় খুব মন্থর গতিতে বাড়ে, এটা ব্যবসার ধর্ম। যখন কমে সেটা মিল মালিকদের ওপর এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর পড়ে। ১৯৮ টাকায় লিটারপ্রতি তেলের দাম ধার্য করা হয়েছে, এটা যদি সোমবার কমে থাকে তাহলে এমনিতেই দোকানদাররা কম দামে কিনবে। কারণ এক সপ্তাহে ২০০ ডলার কমেছে পাম তেলের দাম, ১ হাজার ৯৫০ ডলার থেকে ১ হাজার ৭৫০ ডলারে নেমেছে। এটি কেউ কেনে না, কারণ আরও কমে যায় কি না।

সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘যুদ্ধের ডামাডোল কমে গেলে তেলের দাম আরও অনেক কমে যাবে। ৫০০ ডলার কমবে, এতে অনেক মিল মালিক পথে বসে যেতে পারে! তিনি আরও বলেন, তেলের দাম শুক্রবার থেকে বাড়ানো হয়েছে। অথচ তেল নেই, দোকানদাররা তেল সরিয়ে রেখেছেন। সেটার জন্য তো মিল মালিক দায়ী নয়। আর আজকে মিল মালিকরা জবাবদিহি করছেন। কিন্তু যারা তেল কেনেন তারা আন্তর্জাতিক বাজারে কার কাছ থেকে কিনছেন, কে বিক্রি করছে, তারা শুধু কোম্পানির পরিচয়টাই জানেন।’

ফজলুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে কীভাবে কিনব, কত টাকায় কিনব, সার্বিক খরচ কত, সেটি বোতলের গায়েই লেখা আছে। এটি কেউ মুছে দিলে জবাবদিহি করতে হবে। আমি তথ্য চেয়ে সাহায্য চেয়েছি। আমরা কীভাবে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে পারি। আমি মন্ত্রীকে বলেছি, যখন যে কাজে লাগে আমাকে ডাকবেন। আমরা পাশে আছি। আমাদের পয়সার প্রয়োজন আছে সবার। তবে আগামী জেনারেশন যাতে ভালো ব্যবসায়ী হয় সেটি দেখছি।’

এদিকে মন্ত্রী যখন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন, তখনও ঢাকা ও চট্টগ্রামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান চলছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বাজারে একটি দোকানে ‘গোপনে মজুত করে রাখা’ ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেলের সন্ধান পেয়েছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আর ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তিনটি দোকানকে তারা জরিমানা করেছেন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০