সাম্প্রতিক সময়ে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায়, ব্যবসায়ীরা অজুহাত পেলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও বলে আসছেন, অতিরিক্ত মুনাফার জন্য বাজারের বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর কারসাজি বন্ধে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির পর তাৎক্ষণিক দেশীয় বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ এফবিসিসিআই সভাপতিও। তিনি সরকারকে বাজার মনিটরিং বাড়ানোর আহ্বান জানান। সরকারও বলছে, সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত তেল মজুদ আছে। তাহলে কেন বাজারে সংকট? গণমাধ্যমে খবরে এসেছে, সমস্যা সরবরাহ সংকটজনিত নয়। মূলত উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারীদের অপকৌশলের কারণে সংকট তৈরি হচ্ছে। ভোজ্যতেল বাজারজাতকারীদের রয়েছে বহুমুখী ব্যবসা। যেমন পোলাও চাল, চা প্রভৃতি। কোনো কারণে সরু চাল-চায়ের চাহিদা কমেছে। ভোক্তারা নিত্যপণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই খরচ কমাতে অনেক পণ্য কাটছাঁট করছেন। চিকন চাল, চা এখন বাতিলের খাতায়। কী করবেন, কেনার সামর্থ্য তো নেই।
গতকাল শেয়ার বিজে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা: তেলের সঙ্গে চাল ও চা-পাতা নিতে বাধ্য করছে দোকানিরা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে তেলের বাজারে অস্থিরতার সুযোগে তেল আমদানিকারক কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের তেলের সঙ্গে চাল ও চা-পাতা কিনিতে বাধ্য করছেন। অন্যথায় তেল বিক্রি করছেন না দোকানিরা। অবশ্য ঘরে তেল থাকলেও কিনে মজুত করছেন কিছু গ্রাহক।
মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযানে ‘অসাধু’ ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়। কাকে জরিমানা করা হয়? পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের। কেনা দাম বেশি হলে তো বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে তাদের। উৎপাদক ও বাজারজাতকারীদের কখনও জরিমানা করার কথা শোনা যায়নি। এমন নয় যে, তারা পণ্য মজুদ করেন না, বাজার নিয়ন্ত্রণে কারসাজি করেন না।
টিসিবি ট্রাকসেলে তেলসহ কিছু পণ্য সরবরাহ করে ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা একদিকে সাশ্রয়ী দামে পণ্য সরবরাহ করবে, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু যখন অভিযোগ আসে তাদেরই কেউ নিজেদের অপ্রচলিত কিংবা কম প্রচলিত পণ্য কিনতে বাধ্য করেন পাইকারি বিক্রেতাদের। সরবরাহ শৃঙ্খলে অনিয়ম হলে তার মাশুল দিতে হয় সাধারণ ভোক্তাকে। এখন ভোক্তারা নিত্যপণ্যই কিনতে পারছেন না; চা-পোলাও চাল কিনবেন কীভাবে! চালের উৎপাদন, বিপণন, মজুত ও আমদানিতে রেকর্ড এবং কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি সত্ত্বেও নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতিতে বোঝা যাচ্ছে, বাজারে কারসাজি চলছে। রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে, সেসব খাদ্যপণ্যও সংঘবদ্ধ চক্রের কব্জায়।
প্রতি বছর ভোজ্যতেল আমদানিবাবদ বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। সয়াবিন তেলের অন্যতম বিকল্প হিসেবে সরিষার চাষাবাদ জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করলে একদিকে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন, অন্যদিকে সরিষা চাষেও তারা উৎসাহিত হবেন। এতে ভোজ্যতেলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। ক্রমেই ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন নিন্ম আয়ের খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী। টিসিবির পণ্য এখন নিন্মআয়ের মানুষজনই কেনেন না, অপেক্ষাকৃত সামর্থ্যবান বলে পরিচিতিরাও কেনেন। পণ্য কেনার লাইনে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি নিত্যদিনের দৃশ্য। সব বিবেচনায় সরকারকে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে।