তেলের বিনিময়ে ইরানের গ্যাস চায় ইরাক

শেয়ার বিজ ডেস্ক:তেলের বিনিময়ে ইরানের গ্যাস নিতে চায় ইরাক। অর্থ পরিশোধ করতে বিলম্বের অবসান ঘটাতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহম্মদ শিয়া সুদানি। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থ পরিশোধে সমস্যা হওয়ায় এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। খবর: রয়টার্স।

সুদানি বলেন, ১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইরাকে ৫০ শতাংশ গ্যাস রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে তেহরান। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারেনি বাগদাদ। তবে তেহরান এখন ইরাকের অপরিশোধিত তেলের বিনিময়ে গ্যাস দেয়া শুরু করতে চায়।

গত শনিবার থেকে বাগদাদে সফররত এক ইরানি প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপের পর এ তথ্য দেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট।

ইরান থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস আমদানি করে ইরাক, যা মোট আমদানির এক-তৃতীয়াংশ। তেহরান থেকে নিজেদের চাহিদার ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ আমদানি করে ইরাক। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার বেড়ে গেলে বিদ্যুৎ আমদানি বাড়িয়ে দেয় ইরাক।

ইরাক এই আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে সমস্যায় পড়েছে। তাদের কাছে ইরানের পাওনা ১১ বিলিয়ন ইউরো (১২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার)। সুদানি বলেন, তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থ পরিশোধ করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা খাদ্য ও ওষুধ আমদানির অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ করা যাচ্ছে। এ অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। এ প্রক্রিয়ার কারণে অনাকাক্সিক্ষত বিলম্ব হচ্ছে এবং পরবর্তীকালে এ অর্থ ইরানকে আর দেয়া হয় না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী সুদানির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ফারহাদ আলালদিন।

গ্যাস মজুত করা হচ্ছে বলে জানান সুদানি। জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দু-তিন বছর পরও প্রতি গ্রীষ্মে নাগরিকদের বলতে চাই নাÑ‘তারা গ্যাস দিচ্ছে না, তারা আবার গ্যাস দেয়া শুরু করেছে।’

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মুখপাত্রের কাছে ইরাক ও ইরানের এই তেলের বিনিময়ে গ্যাস দেয়ার বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মন্তব্য চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। এতে নিষেধাজ্ঞার শর্ত ভঙ্গ হবে কি না, তাও তিনি জানাতে চাননি। তিনি বলেন, ইরান বা ইরাকের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না এবং বাইডেন প্রশাসন ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে যাবে। তবে ইরাকের জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতাকে সমর্থন করে ওয়াশিংটন, বলেন তিনি।

চিন্তক প্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির বিশ্লেষক হেনরি রোম বলেন, আমার মনে হয় না এই বিনিময় প্রথা শুরু হলেও ইরানের মুদ্রা পাওয়ার আকাক্সক্ষা শেষ হয়ে যাবে। আমি মনে করি সুদানি যেভাবে বলেছেন, তাতে ইরান পুরোপুরি সম্মত হবে না। এটা বাস্তবায়িত হলেও ইরাকে থাকা ইরানের অর্থ পাওয়ার ইচ্ছা পরিহার করতে পারবে না ইরান।

প্রসঙ্গত, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেকের দ্বিতীয় শীর্ষ তেল উৎপাদক দেশ ইরাক। দেশটি যেন ইরানি গ্যাসনির্ভরতা কমিয়ে আনে, সেজন্য চাপ দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

চলতি বছরের এপ্রিলে আঞ্চলিক তেল ও গ্যাস বিশ্লেষণকারী কোম্পানি মিটস জানায়, এর আগের কয়েক মাসের তুলনায় চলতি ইরাকে সরবরাহকৃত ইরানি গ্যাসের পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে। ইরাকের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মিটস জানায়, ইরাকের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় ব্যবহার করার জন্য দেশটি ইরানের কাছ থেকে গ্যাস আমদানি করে।

ইরাক প্রতিবছর ইরানের গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য চার বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় করে। তবে এর বাইরে দেশটি নিজেদের বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাস খরচ করে। এই অবস্থার পরিবর্তন চাইছে দেশটি। এজন্য তারা এরই মধ্যে ফ্রান্সের টোটাল এনার্জিসের সঙ্গে বসরা অঞ্চলের গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য চুক্তি করেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০