তেলের সঙ্গে চাল ও চা-পাতা নিতে বাধ্য করছে দোকানিরা

হামিদুর রহমান: দেশে তেলের বাজারে অস্তিরতা চলছে কয়েকদিন থেকেই। এ সুযোগে তেল আমদানিকারক কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের তেলের সঙ্গে বাধ্য করছেন চাল ও চা-পাতা নিতে। অন্যথায় তেল বিক্রি করছে না দোকানিরা। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ গ্রাহক। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

চায়ের দোকান থেকে গণপরিবহন ও অফিস কোথাও থেমে নেই তেলের বাজার নিয়ে আলোচনা। কিছু গ্রাহক ঘরে তেল থাকতেও বাড়তি কিনে স্টক করছে। অন্যদিকে তেলের দোকানে গ্রাহকদের আনাগোনা বাড়ারও প্রভাব পড়ছে। এতে একদিকে তেলের মূল্য বাড়ছে অন্যদিকে তেল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে একটি মহল। এছাড়া তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের অসচেতনতাকেও দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন গত সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, পূর্ব রাজাবাজার, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত দুই দিন থেকে তেলের চাহিদা একটু কম। তবে তেলের দোকানে মানুষের আনাগোনা বেশি থাকায় তেল কোম্পানিগুলো দাম বাড়ার আশায় রয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিগুলো বাড়তি লাভের আশায় কৌশলে তেলের সঙ্গে চাল ও চা-পাতা নিতে বাধ্য করছেন। কোনো গ্রাহক চাল বা চা-পাতা নিতে অনাগ্রহ দেখালে তার কাছে তেল বিক্রি করছেন না দোকানিরা।

তেলের সঙ্গে চা-পাতা ও চাল নিতে কেন বাধ্য করছেনÑএ বিষয়ে দোকানিদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানায়, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তেল কোম্পানিগুলো তাদের যে প্রোডাক্টগুলো কম চলে সেই প্রোডাক্ট কিছুটা ডিসকাউন্ট দিয়ে কৌশলে বিক্রি করছেন। এতে কোম্পানিগুলো দুই ধরনের ব্যবসা করছে।

দোকানিরা বলেন, আমরাও চাই না গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়–ক। কিন্তু কোম্পানিগুলো এক সুযোগে দুই রকম ব্যবসা করছে। আর কোনো দোকানি তেলের সঙ্গে চা-পাতা ও চাল বিক্রি করতে না চাইলে তাকে পরবর্তীতে পণ্য দেয়া হবে না বলেও কিছু দোকানি অভিযোগ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তেল ব্যবসায়ী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কোম্পানিগুলো বরাবরই রোজার আগে দিয়ে নানা কৌশলে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এবার নতুন করে যুদ্ধ যোগ হওয়াই এর প্রভাবটা কয়েকগুণ বেশি পড়েছে। ফলে এ সুযোগটিই তেল আমদানিকারকরা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে। তেলের সঙ্গে চাল ও চা-পাতা বিক্রি তাদের নতুন কৌশল। এ বিষয়ে কোনো দোকানি কথা বলতে গেলে তার সঙ্গে পরবর্তীতে ব্যবসা বন্ধ করে দেবে অথবা মাল দিতে গড়িমশি করে। তাই দোকানিরাও নিরুপায়।’

এদিকে গ্রাহকদের অভিযোগ, ‘তেল নিতে একেক এলাকায় একেক দোকানে ভিন্ন ভিন্ন সিন্টেম। ৫ লিটার রুপচাঁদার সঙ্গে কোনো দোকানে দুই কেজি চাল কিনতে হচ্ছে আবার কোনো দোকানে এক কেজি কিনতে হচ্ছে। আবার পুষ্টি তেলের সঙ্গে ৪০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রামের চা-পাতা কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। আবার কোনো মহল্লার দোকানে যেকোনো কোম্পানির তেল কিনতে চাল, মসলা, চা-পাতা, চিনিসহ হরেক রকম আইটেম কিনতেও বাধ্য করছে গ্রাহকদের।’

বাজার করতে আসা রাজধানীর রাজা বাজার অধিবাসী রুহুল আমিন। চাকরি করছেন একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে হিসাব বিভাগে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এক মাসেরও বেশি সময় আগে ৫ লিটার তেল কিনেছিলাম আজ সকালে তা শেষ হয়েছে। নতুন করে ৫ লিটার তেল কিনলাম। সঙ্গে দুই কেজি চাল নিতে হলো, না হলে তেল দেবে না। দোকানির কাছে জানতে চাইলে দোকানি বলছেন, তাদের কিছু করার নেই। কোম্পানিগুলো তাদের বাধ্য করছেন। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে এদেশে বাণিজ্য। তেল কেনার টাকা নেই অথচ পোলাও চাল নিতে বাধ্য করছে। পৃথিবীর কোনো দেশে মানুষকে এভাবে জিম্মি করে ব্যবসা করে তা জানা নেই। 

রাজধানীর খিলগাঁও অভিবাসী মাহফুজ জামান। পেশায় ব্যাংকার। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংকের চাকরি করেও সংসারে পারফেক্টলি জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধু তেল না সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মাসে ৮ হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হয়েছে কেবল কাঁচাবাজার করতে। এখন তেল কিনতে এসে দেখছি নতুন কাহিনী। তেল কিনলে সঙ্গে চাল অথবা চা-পাতা নিতে হবে। ৫ কেজি রুপচাঁদা তেলের সঙ্গে দুই কেজি চাল নিতে হবে। তেলের মূল্য ৮০০ টাকা, সঙ্গে দুই কেজি চাল ২২০ টাকা। অর্থাৎ ৮০০ টাকার তেলে ১০২০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এটা সত্যি অমানবিক। এমন আচরণে নিজেদের খুব অসহায় লাগছে। আল্লাহকে বিচার দেয়া ছাড়া কিছু করার নেই।’  

এদিকে তেলের সঙ্গে চাল কিনতে বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আহম্মেদ সাঈফ মোনতাসির নামে এক ভোক্তভোগী গ্রাহক পোস্ট করেছেনÑদোকানে তেল কিনতে গেলাম, বলল তেল নেই। তেলের বোতল দেখিয়ে বললাম ওই যে তেল আছে! বলল তেলের সঙ্গে চাল, ডাল, মসলাসহ ফুল সেট বাজার নিতে হবে!

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০