অলিগার্কি বা কতিপয়তন্ত্র বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় একটি শক্তিশালী স্থান দখল করে আছে। মূলত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সিন্ডিকেটের কবল থেকে বাজারকে মুক্ত করে উš§ুক্ত প্রতিযোগিতা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে বাজারে স্বস্তি ফেরানো সম্ভব নয়। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল এ সিন্ডিকেট। এমনটি অতি জরুরি সেবাপণ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনেও কতিপয় বেসরকারি কোম্পানির আধিপত্য পরিলক্ষিত হয়েছে। অনেক কোম্পানি বিদ্যুৎপাদন না করেই কাড়ি কাড়ি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে। ভোগ্যপণ্যের বাজারও এভাবে কতিপয় কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো যেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ খাতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে, তাদেরই বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছে। বর্তমানে বাজারে লাগামহীন পরিস্থিতি বিদ্যমান। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘সাত গ্রুপের কাছে জিম্মি তেল-চিনির আমদানি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশের অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারে আধিপত্য সিটি, মেঘনা, এস আলম, টিকে গ্রুপ, বসুন্ধরা, আবদুল মোমেন ও দেশবন্ধু গ্রুপের। এসব প্রতিষ্ঠান পরিশোধনের মাধ্যমে বাজারজাত করে। এ কয়েকজন ব্যবসায়ীর হাতে নিয়ন্ত্রিত হয় দেশের তেল ও চিনির বাজার। তাদের জন্য নতুন করে কেউ আমদানির সুযোগও পায় না। অথচ পরিশোধিত তেল ও চিনি আমদানির সুযোগ দিলে সহজে বাজার প্রতিযোগিতা সৃষ্টি ও দামের ভারসাম্য থাকত।
আধুনিক অর্থনীতির মূল দর্শনই হচ্ছে উš§ুক্ত প্রতিযোগিতা। যেখানে অসংখ্য ক্রেতা ও বিক্রেতা থাকবেন এবং তাদের মধ্যে উš§ুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজারে ভারসাম্য দাম নির্ধারিত হবে। কিন্তু কতিপয়তন্ত্র জারি থাকলে বিক্রেতারা মিলে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেন। এতে বিক্রেতা অধিকহারে মুনাফা করার সুযোগ পান এবং ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। বর্তমানে দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কেবল তেল ও চিনিই নয়, অন্যান্য আমদানিনির্ভর পণ্যের ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়। পেঁয়াজের বাজারে প্রায়ই অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়। ২০১৯ সালে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। কেবল ২০১৯ সালেই নয়, এরপর একাধিকবার পেঁয়াজের দামে কারসাজির ঘটনা ঘটেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
এমন প্রশ্নে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছিলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চলে যেতে পারে। এতে বোঝা যায়, সিন্ডিকেটের প্রতি তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল। কিন্তু এখন তো সে পরিস্থিতি নেই। এখন একটি নিরপেক্ষ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। কাজেই তারা যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে সহজেই ব্যবস্থা নিতে পারে। সুতরাং সরকারের উচিত বাজারে আধিপত্য বিস্তারকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া। সরকার এ বিষয়ে মনোযোগ দেবে বলেই বিশ্বাস।