নিজস্ব প্রতিবেদক: রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলসহ সাত দফা দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অর্ধদিবস হরতাল পালন করেছে তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। হরতালের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করেন তারা। হরতাল পালনকালে শাহবাগে হরতাল সমর্থকদের
সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে মিছিল-সমাবেশ পণ্ড করে দেয়।
এদিকে, হরতাল সমর্থকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে। গতকাল হরতাল শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এছাড়া ১১ মার্চ খুলনা মহানগরীতে ‘উপকূলীয় মানুষদের নিয়ে’ মহাসমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল হরতাল কর্মসূচিতে সংবাদ সংগ্রহের সময় পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। হরতালকর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়ে তাদের একজনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নেওয়ার সময় সাংবাদিকরা ছবি ও ভিডিও করার চেষ্টা করলে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয় বলে জানা গেছে। হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রতিবেদক কাজী এহসান বিন দিদার ও ক্যামেরা পারসন আবদুল আলিম। এ ঘটনায় সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এরশাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
গতকাল হরতাল সমর্থকরা সকাল ৬টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হন। তারা মিছিল-সমাবেশ করেন। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে সেøাগান দেন। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জড়ো হওয়া হরতাল সমর্থকরা সকালে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হন। জাতীয় জাদুঘরের কাছাকাছি গেলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পুলিশ জলকামান ব্যবহার ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পরে হরতাল সমর্থকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে সরে যান।
শাহবাগের ঘটনায় বেশ কয়েকজন হরতাল সমর্থক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। আহতদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লাকী আক্তার, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর রয়েছেন।
এছাড়া হরতালের সমর্থনে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পল্টন, দৈনিক বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। তবে শাহবাগ ছাড়া অন্যত্র অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বুধবার রাত থেকেই হরতাল সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছিল। হরতালের সমর্থনে সকালে শাহবাগ এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে পুলিশ। এতে কয়েকজন আহত হন। ভয়ভীতি ও হামলা সত্ত্বেও তাদের আন্দোলন চলবে।
হরতাল চলাকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল আন্দোলনে দমন-পীড়ন চালানো সরকারের দুর্বলতারই লক্ষণ। ভারতকে খুশি করার জন্য সরকার এ প্রকল্প করছে। জনগণের করের টাকায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাতিল করা হবে।
সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন থেকে তাদের পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রকল্প বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।