নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক শিল্পের প্রচলতি ও অপ্রচলিত সব ধরনের পণ্যের জন্য পাঁচ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি জ্বালানির দাম নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন’ প্রেক্ষিত কনক্লেভে গতকাল ব্যবসায়ীরা এ প্রস্তাব দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি ছিলেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তার প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ১৮ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাতে, যার পরিমাণ প্রায় ৪৬ কোটি ডলার। তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক বাজার ৪৪৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এ বাজারের মাত্র সাড়ে ছয় বাংলাদেশের দখলে।
তিনি বলেন, এ খাতের শ্রমিকদের বেতন ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, কমপ্লায়েন্স সম্পর্কিত ব্যয় বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক খাতের পণ্যের দাম কমে যাওয়া এবং পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য ক্রেতার ক্রমাগত চাপের ফলে বিশ্ববাজারে আমাদের পোশাক খাতের বাজার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক খাতের সব ধরনের পণ্যে পাঁচ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি এ খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দেওয়া ও আগামী পাঁচ বছরের জন্য জ্বালানির দাম নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে তিনি জ্বালানির উৎস হিসেবে গ্যাসের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা কমানো, স্থানীয় উৎস হতে কয়লা উত্তলোন ও ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নে জ্বালানির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতের প্রস্তাব দেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রস্তাবিত প্রণোদনা একান্ত আবশ্যক। তিনি বলেন, বিভিন্ন বায়িং হাউজ এবং এজেন্সির মাধ্যমে পণ্য কেনার কারণে আমাদের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান থেকে উপযুক্ত দাম পাচ্ছে না। ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলো যেন পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের থেকে সরাসরি পণ্য কেনে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বিজিএমইএ’র প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্যের যথাযথ দাম পাওয়ার বিষয়ে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।
রুবানা হক বলেন, পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা একান্ত আবশ্যক। তিনি বলেন, আমরা এ খাতের ইতিবাচক সংকটে ভুগছি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের ইতিবাচক ইমেজ গড়ে তোলার জন্য গণমাধ্যমের সহযোগিতা খুবই জরুরি। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাতকে টেকসই করার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় হ্রাসে আমাদের সঠিক নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, যথাযথ তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার জরুরি। তিনি এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে উদ্যোক্তা-ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক-গণমাধ্যম, গবেষকসহ সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ের ওপর জোর দেন।
মুক্ত আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম ও বেনজীর আহমেদ, বিজেএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ, পরিচালক মীরান আলী, ইনামুল হক খান, মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, বিকেএমইএ’র প্রাক্তন সভাপতি ফজলুল হক, এইচএনএম’র প্রতিনিধি রজার, বেস্ট সেলার’র সাসটেইনেবল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম, ইনডিটেক্সের মো. রেজাউল করিম ভূঁইয়া ও কামরুল হাসান, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি হায়দার আহমদ খান, বাংলা পোশাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, সহসভাপতি ইমরান আহমেদ, পরিচালক আকবর হাকিম, এনামুল হক পাটোয়ারী, হোসেন এ সিকদার, খন্দ. রাশেদুল আহসান, কেএমএন মঞ্জুরুল হক, ইঞ্জি. মো. আল আমিন, মোহাম্মদ বাশীর উদ্দিন এবং এসএম জিল্লুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।