তৈরি পোশাক শিল্পে ২২% অনানুষ্ঠানিক শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মজুরি গ্রেড রয়েছে। এ গ্রেডে মোট সাতটি ধাপ রয়েছে। কিন্তু এ খাতের ২১ দশমিক ৯ শতাংশ শ্রমিকের ক্ষেত্রে এমন কোনো গ্রেড নেই। গ্রেড ছাড়াই তারা কাজ করছেন। ক্রিশ্চিয়ান এইড ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় এমনটি উঠে এসেছে।

‘আরএমজি খাতে সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি ও পোশাক শিল্পে শোভন কর্মসংস্থা বিতর্ক: প্রেক্ষিত জাতিসংঘের নির্দেশিকা পরিপালন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ এ খাতের শ্রমিক নেতা এবং শ্রমিক সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানরা। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

কোনো শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোনো গ্রেড না থাকার অর্থ হলো তিনি কারখানার অনানুষ্ঠানিক শ্রমিক। এ ধরনের শ্রমিকরা দৈনিক মজুরির বাইরে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। এত বেশি সংখ্যক শ্রমিক কী কারণে আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির বাইরে কারখানায় কাজ করছে, সে বিষয়ে গবেষণা হওয়া উচিত বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া কারখানাগুলো এখন মজুরি বোর্ডের নির্ধারিত কাঠামোর তুলনায় চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগে বেশি আগ্রহী হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। যেসব শ্রমিকের নির্দিষ্ট গ্রেড নেই, তারা এমন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের শ্রমিক হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তৈরি পোশাকশিল্পের ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ শ্রমিক। কিন্তু এখনও বুস্টার ডোজ নেননি কেউ। ৫১টি পোশাক কারখানার এক হাজার ২৪৪ জন শ্রমিকের ওপর এ জরিপ পরিচালিত হয়। যেখানে ৬০ শতাংশ নারী আর ৪০ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক অংশ নেন।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার সময়ে তৈরি পোশাক খাতে উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে, ওই সময় গড়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ শ্রমিককে জোর করে কাজ করানো হয়েছে। যেখানে পুরুষ শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি ছিল। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ৪২ শতাংশ কারখানা কোনো নিয়মের মধ্যে নেই। ৪৫ শতাংশ কারখানা ভাড়ায় চলে। ২৫ শতাংশ কারখানার নির্ধারিত সনদ নেই। জরিপে উঠে এসেছে প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক কারখানাকে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শকদের বাড়তি অর্থ ঘুষ হিসেবে দিতে হয়েছে যা অবৈধ।

শ্রমিকদের টিকা নেয়ার বিষয়ে কারখানার মালিকপক্ষ ও খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেন, শ্রমিকদের টিকা নিতে গেলে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে, এত সময় ব্যয় করে তারা টিকা নিতে আগ্রহী হন না। তাই করোনার সময়ে সরকারি যেভাবে উদ্যোগে নিয়ে প্রথম ডোজ দিয়েছিল সেটা চলমান রেখে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, দেশে এক হাজার ১৩৪টি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে। আসলে কী ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকদের কোনো উপকার হচ্ছে। এটা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। ট্রেড ইউনিয়নের কাজ শুধু আন্দোলন নয়, শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সমন্বয় করা। কিন্তু আমাদের এখানে তা হয় না। কাখানার শ্রমিকরা নিজ উদ্যোগে ট্রেড ইউনিয়ন করেন না। বাইরের লোকজন এটা করে দিচ্ছে।

কারখানায় নারী শ্রমিক কমে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে মালিকদের দাবি, যন্ত্রের ব্যবহার যত বাড়বে শ্রমিক তত কমবে। এখন মেশিন চালাতে হলে দক্ষতার দরকার হয়। বেশির ভাগ নারী শ্রমিকের এক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব রয়েছে। তাই নারী শ্রমিক কমছে। নারী শ্রমিকদের ধরে রাখতে হলে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

শ্রমিক নেতারা জানান, এ পর্যন্ত যেসব শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগ নিয়েছে তাদেরই চাকরি হারাতে হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বৈষম্যের অভিযোগ করে শ্রমিকরা জানান, সরকারি অফিসে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস। পোশাক শ্রমিকদের চার মাস, এ বৈষম্য কমাতে হবে। এছাড়া কাগজে কলমে মাতৃত্বকালীন ছুটির কথা থাকলেও তা বেশির ভাগ শ্রমিক পান না। অনেক ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি নয়, চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।

শ্রমিক নেতারা আরও বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। শ্রমিকের জীবনে সংকট বাড়ছে। চার বছর আগে মজুরি বাড়ানো হয়েছে। মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে মজুরি বাড়ানোর কথা এখনও সরকার বিবেচনা করছে না। যত দ্রুত সম্ভব মজুরি বাড়ানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারের তথ্যানুযায়ী, দেশে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৩ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ৯১১ জন, দুই ডোজের আওতায় এসেছেন ১২ কোটি ১২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৪ জন। আর এ সময়ে বুস্টার ডোজের আওতায় এসেছেন ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯ জন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০