স্যালিউট তোমাদের। জাতির ক্রান্তিলগ্নে তোমরাই বাঙালি জাতির আসা-ভরসার স্থল। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে তোমাদের রক্তের প্রতিদান জাতি কোনোদিন শোধ করতে পারবে না। বাংলার ইতিহাসে যতগুলো ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, জুলাই দুই হাজার চব্বিশের ছাত্র ঘন আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসে এক স্মরণীয় ইতিহাস হয়ে থাকবে। তোমাদের প্রতি এই জাতি ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে, দলমত-নির্বিশেষে সবার বিনম্র ভালোবাসা আজীবন থাকবে। তোমরা জাতির অহংকার, জাতির ভবিষ্যৎ, জাতির নেতৃত্ব।
জগতদল একটি স্বৈরশাসককে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করে দীর্ঘ এক মাসের অধিক এই স্বৈরশাসকের জুলুম অত্যাচার মামলা, হামলা, খুন, অপহরণ সব ধরনের নির্যাতন আর বুলেট সহ্য করেছ। শত শত মেধাবী আমার প্রিয় ভাইদের প্রাণ দিতে হয়েছে। এখনও হাজার হাজার ছাত্র-যুবক-কৃষক-শ্রমিক আহত হয়ে হাসপাতাল ক্লিনিকে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সঠিক চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। জাতি তাদের সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার মাধ্যমে সুস্থতা কামনা করছে।
জাতি তোমাদের আগামীর বাংলাদেশের জন্য হাতছানি দিচ্ছে। তোমরা শিক্ষা-দীক্ষা, পড়ালেখায় যোগ্যতা অর্জন কর। নৈতিকতা, মানবাধিকার, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, শ্রদ্ধাবোধ অনুশীলন কর। পরিবার থেকে সমাজ রাষ্ট্র পর্যন্ত তোমাদের নেতৃত্ব আসাবাদী। এক দলীয় শাসন গণতন্ত্রহীনতা এবং জনগণের অন্য বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করতে তোমাদের প্রচেষ্টা ভালোবাসা জাতি ধারাবাহিকভাবে কামনা করে।
গণতন্ত্র যেভাবে তোমরা পুনরুদ্ধার করেছ একইভাবে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি অর্থ পাচারসহ সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরেকটি সংগ্রাম করতে হবে।
প্রসাশন থেকে ঘুষ দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করার সংগ্রাম করতে হবে। দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী গণতন্ত্রের হত্যাকারী সব দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সব ধরনের সন্ত্রাস নৈরাজ্য মেধাবিহীন এবং শিক্ষার পরিবেশবিরোধী যাবতীয় কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ থাকতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আন্দোলন তোমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
আগামীর বাংলাদেশ তোমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তোমরা দেশ জাতি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। নতুন করে কোনো ধরনের অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়। জামালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যেন নিরাপদে নিজ ভূমিতে বাস করতে পারে সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। সব মানুষ যেন নিজ নিজ আদর্শ ধর্ম রুচি নিয়ে বাস করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনায় তাদের আমানত ব্যবস্থাপনার নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। তাদের ব্যবসার নিরাপত্তা দিতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। মেধার বিকাশ শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান দিতে হবে। বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের কোন কোন জায়গায় তাদের কর্মসংস্থান আছে, বৈধ-অবৈধ, বিদেশি নাগরিকদের তালিকা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এখন থেকে তোমাদের সংগ্রাম হওয়া উচিত, উন্নয়নের পক্ষে, কর্মসংস্থানের পক্ষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করায় তোমাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে। দুর্নীতিবাজ অর্থ পাচারকারী লুটকারীদের তালিকা বের করতে হবে। জনবান্ধব, জনকল্যাণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নতুন করে জনগণের ভোট অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সরকারি-আধা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি খুঁজে বের করতে হবে। বিগত দিনের ভোট ডাকাতের সব নির্বাচন বাতিল করতে হবে। পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশনের বাতিল করতে হবে। এর আগে অনিয়মের নির্বাচনের বিচার করতে হবে।
তোমাদের প্রতি এই জাতির ভালোবাসার শেষ নেই। এ আন্দোলনে সব শহিদ ছাত্র-যুবক বীরদের প্রতি জাতির শোক প্রকাশের ভাষা নেই। সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দেশের জনগণ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দেখতে চায়। আগামীর বাংলাদেশ সুষ্ঠু সুন্দর সব মানুষের আবাসযোগ্য দেশ হিসেবে তৈরি হোক সেই প্রত্যাশা।