Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 6:33 pm

ত্রাণের চাহিদায় বেড়েছে মোটা চাল ও ডালের দাম

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: নভেল করোনাভাইরাসের চলমান আতঙ্কে বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। গতি হারিয়েছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। কমেছে কৃষিপণের দাম। বাংলাদেশও কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে শ্রমিক ও পরিবহন সংকটে পাইকারি বাজাওে ভোগ্যপণের দাম কমেছে। কিন্তু হঠাৎ করে ত্রাণের চাহিদাকে কেন্দ্র করে অসৎ ব্যবসায়িরা বাড়িয়েছে মোট চালের দাম। একইসঙ্গে ত্রাণে চাহিদা বাড়ায় মোটা মসুর ডালেরও দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কেজিতে ১২-১৫ টাকা।

মূলত সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার পর থেকে নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে। ব্র্যাকের এক জরিপেও এমন চিত্র উঠে এসেছে। আর এ সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের পাশাপাশি সামর্থবানরা নিজেদের মতো করে নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেহেতু এসব সহায়তার কাজে মোটা চাল ও মোটা ডাল ব্যবহার হয়, এই সুযোগে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী।

দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত দুই সপ্তাহ ধরে ক্রেতা সংকট চলছে। ফলে একাধিক ভোগ্যপণ্যেও দাম ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে চিকন চালের বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও মোটা চালের দাম বেড়ে গেছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতিবস্তা মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। একমাসের ব্যবধানে বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৮০০ টাকা।

চট্টগ্রামরে একাধিক পাইকারি বাজারের আড়তদার ও রাইসমিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ৫০ কেজির একবস্তা মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। আর একমাস আগে এসব চাল বিক্রি হয়েছিল মাত্র ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। অন্যদিকে বেতি আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিবস্তা ২ হাজার ২০০ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১ হাজার ৮৫০ টাকা। কিন্তু এসব চাল প্রায় ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পাইজাম আতপ ও সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতিবস্তা ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায়। তবে মানভেদে এসব চাল ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ২০ দিন আগেও এসব চালের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ টাকা।

এদিকে থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৮০-১ হাজার ৯০০ টাকা এবং ইরি চাল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ টাকায়। এছাড়া স্বর্ণা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকায়। যা লকডাউনের আগে বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
এদিকে চিকন চালের দাম বেড়েছে তুলনামূলক কম। বর্তমানে প্রতিবস্তা মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।

যা ১৫ দিন আগে ছিলো ২ হাজার ১০০ থেকে -২ হাজার ২০০ টাকা। নাজিরসাইল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। জিরাসাইল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ টাকায়। যা এক মাস আগে ছিল ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। জিরাগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৭০০ টাকায়, যা ২৫ দিন আগে ছিল ৪ হাজার ৩০০ টাকা। কাটারিভোগ চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়, যা ২০ দিন আগে ছিল ২ হাজার ৪৫০ টাকা।

মোটা চালের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ী শান্ত দাশগুপ্ত শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল। মোটা চালের দাম কিছুটা বাড়লেও চিকন চালের দাম বাড়েনি। আর লকডাউনের পর থেকে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। এসব চাল ত্রাণ সহায়তার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তবে চালের দাম বাড়ার পেছনে সরকারেরও কিছুটা দায় রয়েছে। কৃষকদের সুবিধার্থে বেশি দামে ধান কিনছে সরকার।’

অন্যদিকে পাহাড়তী চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, লকডাউনের আগের সপ্তাহে চালের বাজার উর্ধ্বমূখী ছিল। বর্তমানে ক্রেতা সংকটে চালের বাজার স্বাভাবিক। তবে ত্রাণের কাজে মোটা চালের চাহিদা থাকায় ওসব চালের দাম বেড়েছে।

খাতুনগঞ্জ, আসদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, রোজা সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ে। এ সময় গুদামে মজুতের পাশাপাশি দাম বৃদ্ধিও শুরু হয়। রোজার আগে দুই মাসে ছোলা, চিনি, সয়াবিন ও পাম তেল, ডাল, মটরশুটিসহ অনেক ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও সরবরাহ বাড়ে।

কিন্তু প্রথম দিকে এসব পণ্যেও দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও দুই সপ্তাহ ধরে দাম কমে গেছে। কিন্তু মোট চালের পাশাপাশি মোটা মসুর ও মুগ ডালের দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত মোটা মসুর ডালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৩ টাকা। বর্তমানে প্রতিকেজি ৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা লকডাউনের আগে ছিল ৬০ টাকা। মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪২ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১২৫ টাকা। ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৬২-৬৫ টাকায়।

তবে পাইকারিতে ভোজ্যতেলের দাম মণপ্রতি ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সয়াবিন তেলের মণপ্রতি কমেছে ২০০ টাকা। আর পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ৮০০ টাকা কমেছে। একইভাবে পাইকারিতে প্রতিমণ চিনির দাম ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আর পেঁয়াজ-রসুনের বাজার নিম্নমুখী হলেও আদার দাম বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জের ডাল ব্যবসায়ী মো. সালাইমান বাদশা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে করোনা আতঙ্কে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম কমছে। এতে দেশের বাজারেও ছোলা, ডাল, তেল ও চিনির দাম কমে আসে। তবে মোটা ডালের চাহিদা বাড়ায় কেজিতে ১২-১৩ টাকা দাম বেড়েছে।’