ত্রুটিপূর্ণ করারোপ পদ্ধতিতে লাভবান হচ্ছে তামাক কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক:  তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে বর্তমানে প্রচলিত অ্যাড ভেলোরেম পদ্ধতি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। ফলে প্রতি বছর তামাক কোম্পানির লাভ বিস্ময়করভাবে বাড়ছে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। একইসঙ্গে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়লেও তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কাক্সিক্ষত হারে কমছে না। জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ করারোপ পদ্ধতিতে তামাক কোম্পানি লাভবান হচ্ছে আর সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

‘তামাকের কর ব্যবস্থা, তামাক কোম্পানির লাভে সরকারের ক্ষতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে গতকাল বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অনলাইন মিটিং সফটওয়্যার জুমে ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরুদ্দীন আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আব্দুল্লাহ এবং সঞ্চালনা করেন বিএনটিটিপির প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল।

ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির দ্বিগুণ উৎপাদন বৃদ্ধির বিপরীতে মুনাফা বেড়েছে ৫ গুণ। সেই অনুযায়ী সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি। ফলে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে তামাকজাত দ্রব্যে বিদ্যমান অ্যাড ভেলোরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপের কোনো বিকল্প নেই।

তারা আরও বলেন, দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৬২ হাজার মানুষ মারা যায়, যা কভিড-১৯ মহামারিতে বছরে গড় মৃত্যুর ১০ গুণেরও বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারজনিত রোগের কারণে দেশে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, একই সময়ে রাজস্ব আয় মাত্র ২২ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। অসুস্থতা, মৃত্যু ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সঙ্গে রাজস্ব আয় বিবেচনা করলে দেখা যায়, তামাক সেবনের কারণে শুধু তামাক কোম্পানি লাভবান হয়। বিপরীতে জনগণ ও সরকারসহ সব পক্ষ ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়। ত্রুটিপূর্ণ করারোপ ব্যবস্থার কারণে এই সংকট বেড়েই চলেছে। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রবর্তন করতে হবে।

ওয়েবিনারে এসএম আবদুল্লাহ দেশের তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করারোপের বিধান রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করারোপের সুপারিশ তুলে ধরেন। বাজেট প্রস্তাবে নি¤œ স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; মধ্যম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮ টাকা ৭৫ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; উচ্চ স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেয়া হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০