প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী) : নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলস্টেশনে ত্রুটিপূর্ণ লুপ লাইনে আমদানিকৃত পাথর খালাস করা হচ্ছে। আর রেলস্টেশনের কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রায় পাথরবাহী ওয়াগনের লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় পাথরবাহী একটি ওয়াগন ট্রেনের পাঁচটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়েছে। সৈয়দপুর রেলস্টেশনে পাথর খালাসের পর ট্রেনটি ভারতে ফিরে যাওয়ার প্রাক্কালে এ লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। যদিও স্থানীয় রেলওয়ে প্রকৗশল বিভাগ থেকে অনেক আগেই ওই লুপ লাইনটি ওয়াগন প্রবেশের অনুপযোগী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। আর এ-সংক্রান্ত একাধিক চিঠি দেয়া হয়েছে সৈয়দপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষকে।
স্থানীয় রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীর চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথ চালুর পর থেকে বাংলাদেশের আমদানিকারকরা আমদানিকৃত পাথর ওই রেলপথে পাশের দেশ ভারত থেকে সৈয়দপুরে নিয়ে আসছেন। পাথরের ওয়াগনগুলো নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুর রেলস্টেশনে আসার পর তা আনলোড করা হচ্ছে। আর সৈয়দপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত অদক্ষ শ্রমিকের মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে ওয়াগন থেকে আমদানিকৃত পাথরগুলো সরাসরি রেলপথের ওপর ফেলা হচ্ছে। এভাবে দিনে ও রাতে পাথর আনলোড করায় রেললাইন (ট্রাক) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরে ওইসব পাথর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা এক্সাভেটর মেশিন দিয়ে তা পণ্যবাহী ট্রাকে বোঝাই করে গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে সৈয়দপুর রেলস্টেশনের পাঁচ নম্বর লুপ লাইনের দুপাশের মাটিসহ কাঠের সিøপার ও রেলপাতের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। আর এতে প্রায় পাথরবাহী ওয়াগনের লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পাথরবাহী ভারতীয় পাঁচটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়।
রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, গত রোববার হলদিবাড়ী-চিলাহাটি রেলওয়ে লাইনে ভারত থেকে আমদানি করা পাথর নিয়ে একটি মালবাহী ট্রেন সৈয়দপুরে রেলস্টেশনে পৌঁছে। এরপর পাঁচ নম্বর লুপ লাইনে পাথর খালাস শেষে গত বুধবার গভীর রাতে ওয়াগনগুলো ভারতে ফিরছিল। এ সময় সেখানে মালবাহী ট্রেনটির পাঁচটি ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর দিনাজপুরের পার্বতীপুরের লোকোশেড থেকে একটি উদ্ধারকারী (রিলিফ) ট্রেন ঘটনাস্থলে আসে। এরপর প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ১২টায় লাইনচ্যুত ওয়াগন পাঁচটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সুলতান মৃধা জানান, বর্তমানে রেলস্টেশনের পাঁচ নম্বর লুপ লাইনে পাথর আনলোড ও ভেকু ব্যবহার করায় সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও পাথর খালাসে এক্সকাভেটর ব্যবহার করায় লুপ লাইনের কাঠের সিøপারগুলো ভেঙে গেছে। এতে লুপ লাইনটি ওয়াগন প্রবেশের অনুপযোগী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আর সৈয়দপুর স্টেশন মাস্টারকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দিয়ে অবগতও করা হয়। কিন্তু তারপরও স্টেশন মাস্টার অনেকটাই ঝুঁকি নিয়ে পাথরের ওয়াগন ওই লুপ লাইনে প্রবেশ করাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর রেলস্টেশন মাস্টার ওবাইদুল ইসলাম রতন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় এ রেলস্টেশনের লুপ লাইনগুলো চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। রেলওয়ে বিভাগ থেকে লুপ লাইনগুলো সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বলে শুনেছি। আশা করছি, খুব শিগগির লুপ লাইনগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে। তবে সদ্য সৈয়দপুর রেলস্টেশনে যোগদানকারী ওই স্টেশনে মাস্টার রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের দেয়া চিঠির বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি।