ত্রুটি পিছু ছাড়ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ত্রুটির পর ত্রুটি দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমের সার্ভারে। দুই দিন নিরন্তর চেষ্টার পর যে ত্রুটির সমাধান হয়েছিল, সেখানে গতকালই আবার নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে গতকাল বিইএফটিএনের মাধ্যমে অর্থাৎ ব্যাংক টু ব্যাংক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বন্ধ ছিল।

শুধু ফান্ড ট্রান্সফারই নয়, একই নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকায় অনেক ব্যাংকই আরটিজিএস ও চেক ক্লিয়ারিং করতে পারেনি। এ বিষয়ে বেসরকারি একটি ইসলামি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, ‘গত রোববার কিছুটা লেনদেন করা গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল আর করা যায়নি। আমরা সব চেক মঙ্গলবারের (আজ) জন্য রেখে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু বিএফটিএন করতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। আশা করি মঙ্গলবার (আজ) সকাল থেকে লেনদেন করা সম্ভব হবে। অন্য দুটি চ্যানেল চেক ক্লিয়ারিং ও আরটিজিএস সচল রয়েছে।’

এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং হয় বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর গ্রাহক ইলেকট্রনিক উপায়ে অর্থাৎ অনলাইন মাধ্যমে নিজের হিসাব থেকে অন্য হিসাব বা অন্য ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাবে বা কার্ডে টাকা লেনদেন করতে পারেন। সাধারণত উপবৃত্তি, ভাতা, বেতন, বিলসহ বিভিন্ন নিয়মিত অর্থের লেনদেন হয় এ মাধ্যমে। বর্তমানে দৈনিক গড়ে ব্যাংকগুলো এ চ্যানেল ব্যবহার করে দুই হাজার কোটি টাকার অর্থ লেনদেন করছে।

আন্তঃব্যাংক লেনদেন প্রক্রিয়াটি সমাধান হয় বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউসের (ব্যাচ) সার্ভারের মাধ্যমে। কোনো ব্যাংকের গ্রাহক ভিন্ন কোনো ব্যাংকের চেক নিজ হিসাবে জমা দেয়ার পর তা ব্যাচের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। অর্থাৎ চেকের একটি ছবি সার্ভারের মাধ্যমে ব্যাচে জমা দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশ ঘরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে থাকা চেক ইস্যুকারী গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা কেটে চেক জমাদানকারী ব্যাংকে পাঠানো হয়। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত সমন্বয়কারী ও নিরাপত্তার কাজটি করে থাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সেবা-ফির মাধ্যমে। এতে আগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে লেনদেনটি সম্পন্ন হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি চেক ক্লিয়ারিং নামে পরিচিত।

আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) হলো একটি তহবিল স্থানান্তর ব্যবস্থা, যেটির মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক সময়ে তহবিল স্থানান্তর করা যায়। এর মাধ্যমেই যেকোনো অঙ্কের অর্থ লেনদেন করা যায় মুহূর্তের মধ্যেই।

এর আগে গত ১৩ ও ১৫ এপ্রিল সার্ভার ত্রুটির কারণে চেক ক্লিয়ারিং ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। গত ১৮ এপ্রিল তা সমাধান হয়েছিল। এতে গত কয়েক দিন গ্রাহকদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ব্যাংকে গিয়ে ভিন্ন ব্যাংকের চেক জমা দিয়েও অর্থ পাননি। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পোহাতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

জানা গেছে, চলমান লকডাউনে ক্লিয়ারিংয়ের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চেক বেলা ১১টার মধ্যে পাঠাতে হবে ব্যাচে। এসব চেক স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুপুর ১২টার মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। অন্য যেকোনো চেক পাঠানো যাবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত, যা নিষ্পত্তি হবে বেলা ১টার মধ্যে।

সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির জন্য আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে তখন উল্লেখ করা হয়, ‘জরুরি আন্তঃব্যাংক লেনদেন সম্পন্নের সুবিধার্থে সরকার ঘোষিত সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞার সময় বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (বিএসিএইচ) বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘরের কার্যক্রমও সীমিত পরিসরে চালু থাকবে।’

আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি চলাকালে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া ব্যাংকগুলোয় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত লেনদেন চলবে। দাপ্তরিক কাজের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে আড়াইটা পর্যন্ত। সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত ব্যাংকগুলোর একটি শাখা খোলা থাকবে। অন্যদিকে জেলায় সদর শাখা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা সপ্তাহের রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার খোলা রাখতে হবে। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যিক শাখাগুলো নিয়মিত খোলা থাকবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০