শরীরে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে তাকে বলে হাইপোথাইরয়েডিজম ও বেড়ে গেলে হাইপারথাইরয়েডিজম। এ দুইয়ের মধ্যে হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা অনেক বেশি। সামগ্রিক জীবনমানের ওপর থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি সুগভীর ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কম আইকিউ-সম্পন্ন মানুষ, বন্ধ্যত্ব ও স্থূলদেহি হওয়ার পেছনে হাইপোথাইরয়েডিজম অন্যতম কারণ।
সাধারণ লক্ষণ: অবসাদ, সারাক্ষণ ঘুম ঘুমভাব, ওজন বৃদ্ধি, শীতকাতরতা, কণ্ঠস্বর ভারী বা কর্কশ হওয়া, গলগণ্ড বা থাইরয়েড ফোলা প্রভৃতি।
হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যা: হƒৎস্পন্দন কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, বুকে ব্যথা অনুভব করা অথবা হার্ট ফেইলর হতে পারে। হƒদযন্ত্রের আবরণে অথবা ফুসফুসের আবরণে পানি জমা; স্নায়ু ও মাংসপেশির সমস্যা: মাংসপেশিতে ব্যথা বা শক্ত চাপ অনুভব করা, স্নায়ু ও মাংসপেশিনির্ভর রিফ্লেক্স কমে যাওয়া;
নার্ভের নানা সমস্যা: যেমন কার্পাল টানেল সিনড্রোম। বিষণœতা; ত্বকের সমস্যা: শুষ্ক, খসখসে হয়ে যাওয়া, শ্বেতীরোগে আক্রান্ত হওয়া, চুল পড়া।
প্রজননতন্ত্রের সমস্যা: মাসিকের সময় বেশি রক্তপাত, বন্ধ্যত্ব, বারবার গর্ভপাত; পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা: কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে পানি জমা।
হাইপোথাইরয়েডিজম হলে শিশুদের ক্রিটিনিজম হয়। ক্রিটিনিজমের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো মাংসপেশি, হাড় ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বৃদ্ধি না হওয়া। এর ফলে শিশু খর্বকায় হয়, বুদ্ধিহীন হয়ে থাকে। জিব বড় থাকে, মুখ থেকে বেরিয়ে আসে এবং নাভির হার্নিয়া হয়।
কেন হয়: অন্যতম কারণ অটোইমিউনিটি দ্বারা থাইরয়েডের কোষ ধ্বংস হওয়া, নানা রকম ওষুধ, টিএসএইচের (থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন) স্বল্পতা, গর্ভাবস্থায় মায়ের থাইরয়েড হরমোনস্বল্পতা প্রভৃতি।
চিকিৎসা: কম পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন থাইরক্সিন নিঃসৃত হওয়ার জন্য থাইরক্সিন বড়ি খেতে হতে পারে। রোগের ধরনের ওপর নির্ভর করবে ওষুধ সারা জীবন খেতে হবে কি না। যাদের থাইরক্সিন-ঘাটতি সামান্য, উপসর্গও কম, তাদের সারা জীবন ওষুধ খাওয়ার দরকার হয় না। অনেকে ওষুধ ছাড়াও সুস্থ থাকে। কিন্তু যাদের একেবারেই থাইরক্সিন নিঃসৃত হয় না বা কোনো কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে বাদ দিতে হয়েছে বা অটোইমিউন ডিজিজ আছে, তাদের সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যেতে পারে। তবে যারা ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের বছরে অন্তত একবার রক্তে টি-ফোর ও টিএসএইচ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। অন্তঃসত্ত্বা নারীর এসব পরীক্ষা আরও ঘন ঘন করতে হবে।
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ